এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেন চা-দোকানি স্মৃতি

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ১ বছর আগে
পড়ালেখারা পাশাপাশি চা বিক্রি করেন জিপিএ- ৫ পাওয়া স্মৃতি আক্তার l সংগৃহীত ছবি

সংসার চালাতে চায়ের দোকানে কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন স্মৃতি আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী।

ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ময়না গ্রামের বাসিন্দা মো. হারুন শেখের মেয়ে তিনি।

বোয়ালমারীর কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসিতে অংশ নিয়েছেন তিনি।

এই সাফল্যে অনেকেই তার বাড়িতে যেয়ে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এসএসসিতে তেমন একটা ভালো ফলাফল করতে না পেরে এবার তিনি কঠিন সংকল্প করেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করেছেন, বলছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, স্মৃতির বাবা হারুন শেখ পেশায় তাল গাছের কারবারি। তারা দুই বোন এক ভাই। স্মৃতির বড় বোন মনিকা আক্তারও মেধাবী। দারিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রামের পাশাপাশি ফরিদপুরের সারদা সুন্দরী কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অনার্স পাস করেছেন তিনি। ময়না বাজারের পাশেই স্মৃতিদের বাড়ি। আর বাড়ির পাশেই ছোট একটি মুদি দোকানের সঙ্গে আয় বাড়াতে চা বিক্রির একটা দোকান দিয়েছেন স্মৃতি।

বোন মনিকার সঙ্গে পালাক্রমে এই দোকান চালান স্মৃতি। এরই ফাঁকে চলে দুই বোনো পড়াশোনা।

স্মৃতির মা আসমা আক্তার বলেন, আমার শ্বশুর প্রায় ২৫ বছর আগে এই মুদি দোকান দিয়েছেন। তিনি মারা যাওয়ার পরে আমার স্বামী হারুন শেখ দোকান শুরু করেন। তবে আয় উপার্জন তেমন একটা না হওয়ায় এ দোকান ছেড়ে তিনি তাল গাছ বেচাকেনার ব্যবসা শুরু করেন। এরপর পরিবারের অভাব ঘুচাতে বাবার বদলে আমার দুই মেয়ে দোকানের ভার নেয়। বছর কয়েক ধরে তারাই দোকান চালাচ্ছে।

জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় স্মৃতি আক্তার বলেন, পরিবারের আয়ের সংস্থানের পাশাপাশি পড়াশোনার খরচ জোগাতে আমরা দুই বোন বাড়ির পাশে মুদি দোকানে চা বিক্রি করি। প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হলেও এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সারাদিনে চা বিক্রির পাশাপাশি সময় পেলেই পড়াশোনার কাজটা সেরে নিই। পাশাপাশি রাতে যেটুকু সময় পাই কাজে লাগাই। এভাবেই আমরা দুই বোন পড়াশোনা করে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার পথ বেছে নিচ্ছি। তবে অর্থের অভাবে ইচ্ছে থাকলেও কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারি না।

স্মৃতির ইচ্ছে ছিল তিনি চিকিৎসক হবেন। কিন্তু অর্থাভাবে মানবিক বিভাগে পড়েছেন। যে কারণে তিনি ডাক্তারিতে ভর্তি হতে পারবেন না। তাই তিনি আরও উচ্চ শিক্ষা লাভ করে এমন একটি পেশায় নিবেদিত হতে চায় যেখানে থেকে সে মানুষের সেবা করতে পারবে।

এ দুই বোনের বাবা হারুন শেখ বলেন, মেয়েদের এ সাফল্যে আমরা খুবই আনন্দিত। এর আগে তার আরেক মেয়ে অনার্স পাস করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেন। এই টাকা বিরাট কাজে লাগে তাদের পড়াশোনার এ সাফল্যে।

তিনি বলেন, তার মেয়েদের উচ্চশিক্ষা লাভে বড় বাধা আর্থিক সংকট। এই বাধা না থাকলে তারা আরো ভালো ফলাফল করতে পারতো।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. বাচ্চু শেখ বলেন, মনিকা ও স্মৃতির এই সাফল্যের খবর জেনে তাদের বাড়ি গিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে এসেছি। সারা গ্রামের মানুষ এ খবরে আনন্দিত। তারা ভবিষ্যতে পড়াশোনা করে আরো বড় হোক এই কামনাই করি।