পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর আসছে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী কর্মচারীদের সম্পদের হিসাবে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যারা নিয়মিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন, তাদের আলাদাভাবে কোনো সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে না।
সরকার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর এনবিআরে দাখিল করা সম্পত্তির হিসাব বিবরণী সংগ্রহ করবে। এনবিআরে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করা কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রতি বছরের ডিসেম্বরে সম্পত্তির হিসাব বিবরণী নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে হবে। যে সব কর্মচারীর আয়কর বাধ্যতামূলক নয়, তারাও সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন প্রদান করবেন। এমন বিধান রেখে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ২০২২ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাবিত সংশোধনী এনবিআরের সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না তা যাচাই-বাছাই করছে আইন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টদের সম্মতি পাওয়া সাপেক্ষে বিধিমালাটি বাস্তবায়ন হলে সরকারি চাকুরেদের আলাদা করে পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব দিতে হবে না।
বিদ্যমান ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের প্রতি পাঁচ বছর পর ডিসেম্বরে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। ধারা ১৩-তে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব বিবরণী যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাখিল করবেন। প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে তার অথবা তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বা দখলে থাকা শেয়ার, সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বীমা পলিসি এবং ৫০ হাজার টাকা বা ততধিক মূল্যের অলঙ্কারাদিসহ স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দেবেন। কিন্তু ৪৩ বছর আগের এই বিধানকে মানছেন না সরকারি চাকুরেরা।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের পর বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখ করে সরকারি চাকুরেদের সম্পদের হিসাব দিতে গত বছর জুনে সব মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতেও সাড়া মেলেনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
যথারীতি অন্যান্য বছরের মতো গত বছরও (২০২১) হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বাকিরা জমা দেননি তাদের সম্পদের হিসাব। এরপর চলতি বছরের মার্চে আবারও সম্পদের হিসাব দিতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাতেও কাজ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বিধিমালাটি যুগোপযোগী ও সহজীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সরকারি কর্মচারীদের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- কোনো সরকারি কর্মচারী এমন কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারবেন না, যার মূল্য প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। তবে প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান সাপেক্ষে বিনিয়োগের উৎস উল্লেখপূর্বক ও সরকারের পূবানুমোদনক্রমে পূজিবাজারে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানির প্রাথমিক (মাধ্যমিক) শেয়ার বা বন্ড ক্রয় ও বিক্রয় করতে পারবেন।
তবে অফিস চলাকালীন সময়ে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না।
প্রস্তাবিত বিধিমালায় বহাল রাখা হয়েছে- কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে বা অন্য কোনো চাকরি বা কাজ গ্রহণ করতে পারবেন না। তবে জাতীয় বেতন স্কেলের ১৭ থেকে ২০ গ্রেডভুক্ত সরকারি কর্মচারীরা অনুমোদন ছাড়া দাফতরিক দায়িত্বে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে অবহিত রেখে পরিবারের সদস্যদের শ্রম কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে সম্পত্তির ঘোষণাপত্রের সঙ্গে ব্যবসার বিস্তারিত বিবরণ দাখিল করতে হবে।