উপস্থাপন সংস্কৃতি

:: আহমেদ হানিফ ::
প্রকাশ: ২ years ago

“যা কিছু চিরসুন্দর প্রকাশ্যে আনি,

     সৃজনে-আনন্দে সাজাতে ধরা”

বয়স্ক মানুষের যেমন বয়সের দোষে গল্প বলার রোগে পেয়ে বসে তেমনি সহজাত নিয়মেই মানুষের গল্প বলার ইচ্ছা জাগে। এই গল্পটা নিজের যৌবনকালের, সাফল্য, বেদনার আয়োজনকে ঘিরে। তাই মানুষের সমাবেশে বারবার উঠে আসে মানুষের জীবনের গল্প, না বলা কথার শতকথা। মানুষের জীবনটা নাটকের মতোই শত চরিত্রের সঙ্গে লড়াই করে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা, ঠিকে থাকার জন্য সকাল সন্ধ্যা নানান কাজে মনোনিবেশ।
সহজাতভাবে এই কথাগুলো প্রত্যেক মানুষের জীবনের সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই মিলে যাবে। মিলনের সুরে আরোপিত হয় কখনো মানুষের বুকফাটা আহাজারি, তবুও মানুষ তার গল্প বলে। তবে, আজ আমি বলবো উপস্থাপন সংস্কৃতি নামক এক প্রত্যয়ের কথা, যেখানে মিশে আছে নারী ও পুরুষের আনন্দ-বেদনা মিশ্রিত জীবন। উপস্থাপন বলতে আমরা বুঝি নিজেকে অন্যের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা, নিজের কথা বলার আয়োজন।
তবে নারী ও পুরুষের মাঝে এখানে বিস্তর পার্থক্য দেখতে পাই। পার্থক্য সূচিত হয় তার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তায়, মননের উৎকর্ষ চিন্তায় যেভাবে সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটে তেমনি যান্ত্রিকতার আবহে মানুষের চিন্তার রসদ ফুরিয়ে যায়। তবে আর বলি মানুষের মননের কথাগুলো সবার নজরে আসে না তার উপস্থাপন অসাড়তার কারণে।
নারী ও পুরুষের মাঝে জৈবিকভাবে কিছু সীমাবদ্ধতা যেমন দায়ী তেমনি নিজেকে আড়াল করার অভিপ্রায় তাদের লুকায়িত করে সমাজের মানুষের মাঝ থেকে,  তাই আর তাদের গল্প আমাদের জানা হয়ে উঠে না। এই উপস্থাপন সংস্কৃতির চ্যালেঞ্জ গুলো তুলে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করতে কসুর করছি না।
১. অপরাধবোধ মনে করা:
আমরা অনেক সময় নিজেকে কিছু বলা থেকে গুটিয়ে নেই আমরা ভাবি আমার মনে হয় ভুল হচ্ছে, সমাজের মানুষ, বড়জন, বুদ্ধিজীবী শ্রেণি তাতে অপরাধ দেখছে নাতো। সমাজের প্রণীত বিধান লঙ্ঘন করছি নাতো, এই সবে কি আমার অপরাধ হচ্ছে।
২. পাছে লোকের ভয়:
আমাকে নিয়ে কেউ কথা বলছে কিনা, কি বলছে তা নিয়ে আমাদের শত দ্বিধাবোধ। সমাজ উন্নয়নে আমার ভূমিকায় পণ্ডিতজনে ঠাট্টা করছে নাতো এমন ভাবি আর সদা মনে করতেই থাকি আমাদের পিছনে মানুষ সবসময় লেগেই আছে তারা কিছু না কিছু বলছেই।
৩. সত্য কথা বলাতে ভয়ের সঞ্চার:
মানুষ সহজাত নিয়মেই আবদ্ধে থাকতে চায়, সে দেখতেছে একটা অন্যায় হচ্ছে তারপরও সে সত্যটা সবার সামনে বলতে ভয় পান কারণ সে মনে করে তার জন্য তাকে বিপদে পড়তে হবে।সে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের ভয়ে সে চুপ থাকে।
৪. নিজেকে উপস্থাপনায় ভয়:
আমরা অনেক মানুষকে দেখতে পাই মঞ্চে উপবিষ্ট হয়ে কত চমৎকার শব্দে যোগে সাবলীলভাবে কথা বলে যান।
আবার তাদের দেখে আমরা যেমন সুন্দর কথা বলার ধরণরপ্ত করি তেমনি ভয়ে থাকি আমি মঞ্চে কথা বললে মানুষ কিভাবে নিবে?
খুবই বাজে ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবো নাতো,এমন শত কিন্তুর জন্য আমাদের কথা বলতে বাঁধার সঞ্চার করে।
তবে,এটা যতটা না আমাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তারচেয়ে বোধহয় আমরা নিজের প্রতি বিশ্বাসহীন হয়ে পড়ি।
আমরা নিজেদের বুঝতেই চাইনা আমরা কি কি করতে পারবো, কিভাবে করতে পকরলে এটা সবার চেয়ে ভালো হবে।
জানিনা কিভাবে নিজেদের সাজাবো।
তাই এই উপস্থাপন জড়তা-সংকোচ থেকে বের হয়ে আসতে হলে আমাদের করণীয়:
১. নিজেকে উপলব্ধি করা
২. নতুন শব্দের গাঁথুনিতে শব্দের দেওয়াল মজবুত করা
৩. অনুকরণ না করে নিজস্বতা তৈরি করা
৪. পাছে লোকের ভয় পরিহার
৫. সাহসের সাথে সত্যের উদগীরণ
৬. জানা সত্যের উপস্থাপন
এই বিষয় গুলো রপ্ত করার মাধ্যমে ভেঙে পড়া মননের দেওয়ালে আবারো শক্তভাবে গড়ে উঠবে আত্মবিশ্বাসের দেওয়াল। তবেই আমরা আমাদের সবার সামনে তুলে ধরতে আর ভয় পাবো না, লুকায়িত আমি সত্তার জাগরণ হবে। নারী ও পুরুষের মাঝে আবারো আত্মবিশ্বাসের জায়গা এক হবে, পুরুষের দৃষ্টিতে নারী হয়ে উঠবে নতুন চেতনার প্রতীক। কবিতার ভাষার মতো অনর্গল ফুটবে নতুন নতুন সত্যের উন্মোচন।
এই অসাড়তা আঁকড়ে ধরা সমাজের মধ্যে নতুন জীবনের বীন কখনোই বপিত হবে না, তাই চাই মানুষ বলুক তার লুকায়িত সত্যের কথা, নতুন জীবনের আহ্বানের গল্প, যৌবনের চিরউদ্দ্যামতার সোনালি দিনের গল্প। তবেই আমাদের এই উপস্থাপন জড়তা-সংকোচ দূর হবে, মানুষের মননে আবারো কথাদের চাষ হবে।

লেখক: আহমেদ হানিফ; শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net