উপকৃত হয়ে উপকার স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ মুমিন ব্যক্তির অন্যতম একটি গুণ। উপকৃত হয়ে তার উপকারের প্রশংসা করে মনে কষ্ট না দিয়ে সহযোগিতা করাই হলো কৃতজ্ঞতা।
সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ডাক্তার, উকিল, শিক্ষক, ইমাম, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, দোকানদার, ড্রাইভার, কৃষক, শ্রমিকসহ সামাজিক এ জীবনে বেঁচে থাকতে অন্যের দ্বারা সবাই উপকার গ্রহণ করি। যে ব্যক্তির দ্বারা উপকৃত হলাম তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মুমিন হিসেবে দায়িত্ব। বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। অথবা যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও অকৃতজ্ঞ।
উপকৃত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে জীবন পরিবর্তন হয়ে যায়। আমরা মৃত ব্যক্তির সামনে তার কৃতজ্ঞতা করি। কিন্তু জীবিত থাকাকালে তার কখনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিনি। উল্টো সমালোচনা করে তার মনমানসিকতা নষ্ট করে দিয়েছি।
আমাদের চিন্তা-ভাবনাই হলো ভালো দিক নয়, খারাপ দিকগুলো খুঁজে বের করে আলোচনা-সমালোচনায় নিজের জীবন পার করা। আমাদের চিন্তা নোংরা থাকায় অন্যের ভালো দিকগুলো চোখে পড়ে না। ভালো মনের লোকেরা নোংরা চিন্তা করে না। আমরা উপকৃত হয়েও উপকার মনে রাখি না। বরং একটু সুযোগ পেলেই ক্ষতি করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অন্যের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে আমরা কৃপণতা করি। উপকৃত হয়ে হাসিমুখে ধন্যবাদ বা জাজাকাল্লাহ বলতে লজ্জা পাই।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে জাজাকাল্লাহু খাইরান অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন, তাহলে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। তিরমিজি শরিফ। আমাদের উপকার ও সুবিধার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে গাছপালা, পশুপাখি ও জীবজন্তু। এগুলো আল্লাহর অনন্য দান। এরা আমাদের উপকার করে। তাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। তাদের কোনো ক্ষতি করা চলবে না।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। সুরা বনি ইসরাইল : ৭০।
উপকারের কথা স্মরণ রেখে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে ঝগড়া-বিবাধ, হিংসা, চোগলখুরি দূর হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমাদেরকে উপরোক্ত আলোচনা গুলোর প্রতি আমল করার তাওফিক দান করেন আমীন।
লেখক: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট।