প্রশ্নঃ- ঈদের নামাজ কিরূপভাবে পড়িবে?
উত্তরঃ- ১/ মারাকিল ফালাহ কিতাবের মর্মে জানা যায়, ঈদের নামাজের নিয়ত করতঃ তাকবিরে তাহরিমা বলিয়া কানের লতিতে অঙ্গুলি স্পর্শ করিয়া নাভী দেশে হাত বাঁধিবে।
২/ মুক্তাদীগণও ইমামের এক্তেদা করিয়া নিয়ত করিবে। আরবী নিয়ত না জানিলে ইমামের সহিত ছয় তাকবীরে কিবলামুখী হইয়া ঈদের নামাজ পড়িতেছি, আরবী নিয়ত জানা থাকলে আরবী নিয়ত পড়িবেন।
৩/ তৎপর ইমাম ও মুক্তাদীগণ ছোবহানাকা পড়িবে। অতঃপর ইমাম ও মুক্তাদী আল্লাহু আকবার বলিয়া কানে উলা দিয়া হাত ছাড়িয়া দিবে ও তিন তাকবির বলিতে যত সময় লাগে ততক্ষণ ঝুলান রাখিবে। এরূপভাবে তিনবার তাকবির বলিয়া কানে উলা দিয়া শেষবারে হাত বাঁধিবে।
প্রকাশ থাকে যে, ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহর মতে তাকবীরের মধ্যে তিনবার তাকবির বলিতে পারে, এমত বিলম্ব করিবে। সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লহু আকবার পড়িতে যত সময় লাগে ততক্ষণ হাত ঝুলাইয়া বিলম্ব করিবে। আলমগীরী কিতাবে (তরীকুল) হাকায়েক কিতাব হইতে লিখিয়াছেন- তাকবীরের ফাঁকে তিন তাসবিহ বলিতে পারে এই পরিমাণ সময় হাত ঝুলানো রাখিবে।
শায়েখগণ এই কথার উপর ফতোয়া দিয়াছেন।
৪/ তৎপর ইমাম চুপে চুপে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়িবে।
৫/ পরে ইমাম সূরা ফাতিহা পড়িয়া কিরাত পড়িবে। ঈদের নামাজের প্রথম রাকয়াতে ‘সাব্বিহিসমা’ সূরা ও দ্বিতীয় রাকয়াতে ‘হালআতাকা’ সূরা পড়া মুস্তাহাব।
৬/ তৎপর যথারীতি রুকু, সিজ্দাহ করিয়া দ্বিতীয় রাকয়াতের জন্য দাঁড়াইবে।
৭/ ইমামের ফাতিহা ও কিরাত পড়া শেষ হইলে পূর্বের ন্যায় কানে উলা দিয়া ইমাম ও মুক্তাদীগণ তাকবির বলিবে ও চতুর্থ তাকবির বলিয়া সকলেই রুকুতে যাইবে ও যথারীতি সিজদাহ এবং আত্তাহিয়্যাতু ও দরুদ শরীফ পাঠ করিয়া সালাম ফিরাইয়া নামাজ শেষ করিবেন। যদি কেহ দ্বিতীয় রাকয়াতের সূরা কিরাতের পূর্বে তিন তাকবির বলে তবে জায়েয হইবে। কিনতো সূরা কিরাতের পর তিন তাকবির বলা মুস্তাহাব।
৮/ তৎপর দুই খুৎবাহ পড়িবে ও দুই খুৎবাহর মধ্যখানে কিছুক্ষণ বসিবে। যে খুৎবায় ঈদ সম্বন্ধে উপদেশাবলী আছে, এরূপ খুৎবাহ পড়া মুস্তাহাব।
প্রশ্নঃ- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজে কোন পার্থক্য আছে কি না?
উত্তরঃ- মারাকিল ফালাহ কিতাবে আছে – উভয় ঈদের নামাজের তারতীব প্রায় একরুপ। কয়েকটি বিষয়ে সামান্য ব্যতিক্রম আছে। যথা –
১/ ঈদুল আজহার নামাজের পূর্বে কিছু না খাওয়া মুস্তাহাব। কেননা হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ পড়িয়া কোরবানির গোশত আহার করিয়াছেন। তবে নামাজের পূর্বে কিছু খাইলে ছহীহ রেওয়ায়েত মতে মাকরূহ্ হইবে না। উক্ত কিতাবে কেহ কেহ বলিয়াছেন যাহার প্রতি কোরবানী ওয়াজিব নহে, তাহার পক্ষে কোরবানীর গোশত দ্বারা খাওয়ার জন্য দেরী করা মুস্তাহাব নহে। পরন্তূ আলমগীরী কিতাবের মর্মে জানা যায়, নামাজের পরে কোরবানীর গোশত দ্বারা আহার করা মুস্তাহাব,
কেননা ইহা আল্লাহ তায়ালার দাওয়াত। শামী ও দুররুল মোখতার কিতাবে আছে – যে ব্যক্তি কোরবানী না করিবে, তাহার জন্য ও কোরবানীর গোশত দ্বারা খাওয়ার নিমিত্ত কিছু বিলম্ব করা মুস্তাহাব।
২/ মারাকিল ফালাহ ও আরকানে আরবা কিতাবে আছে- ঈদুল আজহার তাকবীর উচ্চঃ স্বরে বলা মুস্তাহাব, এই কওলই ছহীহ।
৩/ আলমগীরী কিতাবের মর্মে জানা যায়- ঈদুল আজহার নামাজের পর কোরবানী করিবে। মাজমাউল আনহুর ২য় খন্ডে ও বাহরুর রায়েক কিতাবে হাদীস শরীফ হইতে লিখিয়াছেন যে, নামাজের পূর্বে কোরবানী করা জায়েয হইবে না। হেদায়া ৪ র্থ খন্ডের হাশিয়াতে ছহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ হইতে লিখিয়াছেন যে, আঁ- হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন – যাহারা নামাজের পূর্বে কোরবানী করিবে উহা তাহাদের আহারের জন্য হইবে, অর্থাৎ কোরবানী হইবে না। আর যাহারা নামাজের পরে কোরবানী করে, তাহাদের সুন্নাতে রাসূলুল্লাহ ও কোরবানী আদায় হইবে। আরও লিখিত আছে- আঁ- হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন – নামাজের পূর্বে কেহ কোরবানী করিয়া থাকিলে তাহার উচিত যে, নামাজের পর পূর্ণ কোরবানী করে। হেদায়া কিতাবে আছে- ময়দানে ঈদের নামাজ পড়ার পূর্বে স্থানীয় মসজিদে ঈদের নামাজ পড়িলে জায়েয হইবে।
৪/ বাহরুর রায়েক কিতাবের মর্মে জানা যায়- বিনা ওজরে জামায়াতে ঈদের নামাজ না পড়িয়া ইমামের নামাজ শেষ হওয়ার পর কোরবানী করিলে জায়েয হইবে। কিন্তূ আলমগীরী ও শামী কিতাবের মর্মে জানা যায়, বিনা ওজরে ঈদের জামায়াত তরক করিলে মাকরূহ তাহরীমের গুনাহ হইবে।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমাদের সকলকে ঈদের নামাজ সঠিকভাবে পড়ার তাওফিক দান করেন আমীন।
লেখক: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট।