গত বছরের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণে ইমরান খানকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণ করতে চাপ দিয়েছিল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক নিউজ আউটলেট দ্য ইন্টারসেপ্ট পাকিস্তানের ফাঁস হওয়া একটি সরকারি নথি সাইফার এর বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে।
সাইফার হলো আমেরিকার ক্যাবল সিস্টেমের মত পাকিস্তানের একটি গোপন সরকারি নথি প্রেরণ ব্যবস্থা, যা তাদের দূতাবাসগুলো ব্যবহার করে থাকে।
পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের সেই বৈঠকের এক মাস পর, পার্লামেন্টে একটি অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়, যার ফলে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অনাস্থা ভোটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিল বলে ধারণা করা হয়।
ফাঁস হওয়া সাইফার থেকে জানা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কীভাবে ইমরান খানকে উৎখাতে চাপ দিয়েছিল এবং বিনিময়ে ছিল ইসলামাবাদের সাথে উষ্ণ সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি আর তা না করলে পাকিস্তানকে একঘরে করে রাখার হুমকিও দিয়েছিল।
গোপনীয় শিরোনামের লেখা সেই নথিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা দক্ষিণ ও মধ্য-এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ খান মধ্যে বৈঠকের বিবরণ রয়েছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর একটি সূত্র ইন্টারসেপ্টকে নথিটি সরবরাহ করেছে বলে তারা জানিয়েছে।
২০২২ এর ২ মার্চ বৈঠকের কয়েক দিন আগে, সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির শুনানিতে লু পাকিস্তানের নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট এক প্রশ্নের জবাবে সেখানে তিনি বলেন, ইউরোপীয়রা পাকিস্তানের অবস্থান নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন, এমন অবস্থান অপ্রত্যাশিত। এটি আমাদের কাছে নিরপেক্ষ অবস্থান বলেও মনে হয় না।
সেদিন লু আরও বলেছিলেন, এ বিষয়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাথে আলোচনা করে তার মনে হয়েছে ইউক্রেন ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান ইমরান খানের নিজের নীতিগত সিদ্ধান্ত।
অনাস্থা ভোটের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় কিনা তা দেখার জন্য আমাদের কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে, (যদি হয়) এই ইস্যুতে আমাদের মধ্যে বড় মতবিরোধ থাকবে না এবং ক্ষতগুলো খুব দ্রুত সেরে যাবে। আমি মনে করি যদি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সফল হয় তবে ওয়াশিংটনে পক্ষ থেকে সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।
২০২২-এর ৮ মার্চে রবৈঠকের একদিন পর সংসদে ইমরান খানের বিরোধীরা অনাস্থা ভোটের প্রক্রিয়া শুরু করে।
পাকিস্তানি ক্যাবলে লু-এর উদ্ধৃতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, এই কথিত নথিতে এমন কিছুই নেই যা প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে নেতা নির্বাচন বিষয়ে কোনো অবস্থান নিয়েছে।
আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইতোপূর্বে পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তনে নিজেদের সম্পৃক্ততা বার বার অস্বীকার করে এসেছে।