পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস আজ (শুক্রবার)। ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় অধিবেশনে আন্তর্জাতিক জেনোসাইড কনভেশন গৃহীত হয়। এটি জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত প্রথম মানবাধিকার চুক্তি।
কনভেনশনটি ১৯৫১ সালের ১২ জানুয়ারি কার্যকর হয়। সাধারণ পরিষদ ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
এই ঘোষণার পর থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস পালন করে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস এক বার্তায় বলেছেন, ‘আজ সারা বিশ্বে জেনোসাইডের শিকার এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। অতীতে এই অপরাধ প্রতিরোধে আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা পুনর্বিবেচনা করার এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতিরোধ প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করার দিন।’
তিনি বলেন, জেনোসাইড অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত কনভেনশন গৃহীত হওয়ার ৭০ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিশ্বের অনেক জায়গায় জেনোসাইডের হুমকি রয়ে গেছে। বৈষম্য ও ঘৃণামূলক বক্তব্য, গণহত্যার প্রাথমিক লক্ষণ সর্বত্র বাড়ছে। জেনোসাইডের অভিশাপ থেকে মানবতাকে মুক্ত করার লক্ষে এই বিপজ্জনক প্রবণতাগুলোর বিরুদ্ধে শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং দৃঢ় পদক্ষেপ প্রচারের জন্য আমাদের আরও অনেক করণীয় আছে।
সংখ্যালঘুসহ ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোকে রক্ষা এবং বৈষম্য ও নিপীড়ন মোকাবিলায় প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় এবং মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধরে বাংলাদেশে আপামর জনসাধারণের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী পৃথিবীর ইতিহাসের বর্বরতম জেনোসাইড পরিচালনা করে। এই জেনোসাইডের জাতিসংঘে স্বীকৃতি আজো মেলেনি। হয়নি অপরাধীদের বিচারও। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন করা হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতির দাবিতে কাজ করছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ১৯৭১ গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোইড স্টাডিজ বিভাগ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, আমরা একাত্তর ও প্রজন্ম ৭১’ সহ বেশকিছু সংগঠন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রবাহমান সংগঠন আমরা একাত্তর আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ ও প্রতিকার দিবস উপলক্ষে দেশে-বিদেশে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।এর মধ্যে রয়েছে নিউইয়র্কের ইউনাইটেড নেশনস প্লাজায় মানববন্ধন ও সেমিনারের আয়োজন, চুকনগর জেনোসাইডের ওপর শিল্পী কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাসের আঁকা ৫০ ফুট দীর্ঘ এক অঙ্কন চিত্র খুলনার গণহত্যা জাদুঘরের কাছে হস্তান্তর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি চেয়ে বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি দেওয়া, জেনোসাইড সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ ও বধ্যভূমি পরিদর্শন।
আজ ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিশেষ আলোচনা ও নাট্য-প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। খুলনায় ১৯৭১ গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর আন্তর্জাতিক সেমিনার ও প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এছাড়াও দেশের বৃহত্তম বধ্যভূমি চুকনগরে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার।