বিষন্নতায় ভুগছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ। এছাড়া স্পেনে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা জোগাতে না পারায় হতাশাগ্রস্ত হন তিনি। এসব কারণে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বোধ করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ফারদিন।
এ তথ্য উল্লেখ করে ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি আমাতুল্লাহ বুশরার অব্যাহতি চেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রামপুরা থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মামলাটির শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
প্রতিবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ফারদিন বুয়েটের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পারিবারিক জীবনে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় তাকে পড়াশোনার ফাঁকে টিউশনি করতে হতো। স্পেনে আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য তিনি বুয়েট থেকে মনোনীত হন। তবে স্পেনে যেতে প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে না পারায় হতাশায় ভুগছিলেন ফারদিন।
এসব কারণে বুয়েটে পরীক্ষার ফল ক্রমাগত খারাপ হওয়ায় জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বোধ করতে থাকেন ফারদিন। এক পর্যায়ে তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। বিষয়টি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিডিআর পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে। এরপর ২০২২ সালের ৫ নভেম্বর সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন ফারদিন। সিডিআর ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে এর সত্যতা পাওয়া যায়। তবে মামলাটির তদন্তকালে ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
সুরতহাল, ময়নাতদন্ত, আইটি বিশেষজ্ঞের মতামত ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় পাওয়া তথ্য পর্যালোচনায় ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনাটি যে একটি খুনের ঘটনা তা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বুয়েট পড়ুয়া ছেলের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে হত-বিহ্বল হয়ে বুশরাকে আসামি করে ফারদিনের বাবার মামলা দায়েরের বিষয়টি তথ্যগত ভুল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামিদেরও মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার বলেন, ফারদিন যে খুন হয়েছেন বিষয়টি প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। তথ্যগত ভুলে বুশরাকে এ মামলার আসামি করা হয়েছে। তাই মামলার দায় থেকে বুশরার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
বুশরার বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমরা বারবার বলেও কাউকে বিশ্বাস করাতে পারিনি যে বুশরা কোনোভাবেই ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত নয়, সে সম্পূর্ণ নির্দোষ। আজ পুলিশ এ মামলা থেকে বুশরার অব্যাহতি চেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। বিনা কারণে কেন তাকে দুই মাস জেল খাটতে হলো? এর জবাব কে দেবে?
গত বছরের ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ ঘটনায় বুশরাসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা পর লাশ গুম’ করার অভিযোগ তুলে রামপুরা থানায় নিহত ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে ১০ নভেম্বর রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় আদালত তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।