আজ বন্ধু দিবস

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৫ মাস আগে
বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে আগস্টের প্রথম রবিবারে বন্ধু দিবস পালিত হয়।

বাপ্পি লাহিড়ী আর মুন্না আজীজের গাওয়া গান—একটাই কথা আছে বাংলাতে মুখ আর বুক বলে এক সাথে সে হলো বন্ধু-বন্ধু আমার, বন্ধু আমার/…এক মার গর্ভেতে জন্ম না হয়, বন্ধুকে বলি তবু নিজেরি যে ভাই রক্তের ব্যবধান তুচ্ছ যে তাই/ হৃদয়ের এতো মিল রয়ে গেছে যাতে তুমি যে বন্ধু বন্ধু আমার…’

বন্ধুত্ব এমনই। আজ বন্ধু দিবস। প্রতিবছর আগস্টের প্রথম রবিবার বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হয়। কথায় আছে, একটি ভালো বই ১০ জন বন্ধুর সমান। আর একজন ভালো বন্ধু একটা সম্পূর্ণ লাইব্রেরির সমান। চলতে চলতে কখনো কখনো বন্ধুর সঙ্গে মান-অভিমানের ঘটনা ঘটে। আবার অনেক সময় জীবনের ব্যস্ততা বন্ধুদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আমরা কেবইল ব্যস্ততা আর পরিবার কেন্দ্রিক হয়ে পড়ি। শত ব্যস্ততার মধ্যে বন্ধুর জন্য একটু সময় থাকুক।

আজ দুয়ারে এমন এক সময় বন্ধু দিবস এসেছে এই সময় উত্তাল রাজনৈতিক পরিবেশ। দিবসটিতে বন্ধুর খোঁজ নিন, তাকে সময় দিন। দেখা করা সম্ভব না হলে মেসেজ পাঠান।

দেখা করতে না পারলে যা করবেন—
WhatsApp-এ হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডের ছবি পাঠাতে পারেন: এর জন্য প্রথম আপনার হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করতে হবে। তারপরে আপনার প্রিয় বন্ধুকে মেসেজ, ছবি বা ভিডিও পাঠানোর জন্য তার মেসেজ বক্সে যান। এবার মেসেজ বক্সের চ্যাটে গিয়ে ফটো গ্যালারিতে ডাউনলোড করা ছবি বা ভিডিও সিলেক্ট করে পাঠিয়ে দিন।

WhatsApp GIF পাঠাতে পারেন: হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাট ওপেন করুন। তারপর অপশনে গিয়ে আপনার পছন্দের জিফ বা স্টিকার বন্ধুকে পাঠিয়ে দিন।

উল্লেখ্য, ১৯৫৮ সালের ২০ জুলাই প্যারাগুয়ের চিকিৎসক র‌্যামন আর্থেমিও ব্রেচ বন্ধু দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। এরপরে গঠন করা হয় ‘বন্ধুত্ব ক্রুসেড’। পরবর্তীতে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান ৩০ জুলাইকে বন্ধু দিবস ঘোষণা করেন। তবে ভারত-বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে আগস্টের প্রথম রবিবারে বন্ধু দিবস পালিত হয়।

আরেকটি মত প্রচলিত আছে, বন্ধু দিবসের পরিকল্পনা ও উৎপত্তি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ১৯১৯ সালে সর্বপ্রথম আগস্ট মাসের প্রথম রোববার ‘বন্ধু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে পরবর্তী সময়েও তারা নিজেদের মধ্যে কার্ড ও উপহার বিনিময় করত। এভাবেই বন্ধু দিবসের উৎপত্তি।

অন্য আরেকটি মত হলো, ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এক ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ওই ব্যক্তির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। সেই দিনটি ছিল আগস্ট মাসের প্রথম রোববার। তখন থেকেই তার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে মার্কিন কংগ্রেস ১৯৩৫ সালের আগস্ট মাসের প্রথম রোববারকে ‘বন্ধু দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর বেশকিছু দেশ বন্ধু দিবস পালনের সংস্কৃতিকে সাদরে গ্রহণ করে। এভাবেই এ দিবস পালনের পরিসর বাড়তে থাকে।

বন্ধু সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য
১. এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক জীবনে একজন মানুষের সঙ্গে গড়ে ৩৯৬ জনের বন্ধুত্ব হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রতি ১২ জনে একজন টিকে থাকে। ২. গবেষকদের মতে, বন্ধুরা কাছাকাছি থাকলে মানুষের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং তা রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। ৩. শিশুরা হাঁটা ও কথা বলা শেখার আগেই বন্ধুত্বের অনুভূতি টের পেতে পারে। একটি গবেষণায় বন্ধুদের মাঝে নাকি ‘জিনগত মিল’ পাওয়া গেছে!

জানা যায়, সেই গবেষণায় গবেষকরা ১ হাজার ৯৩২ জন মানুষের ওপর জরিপ চালান। আত্মীয়দের বাইরে তাদের বন্ধুবান্ধব ও অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে জিনগত বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণও করা হয়। একই সামাজিক পরিমণ্ডলের মানুষের জিনে প্রায় এক শতাংশ মিল পাওয়া যায়। আর অনাত্মীয় বন্ধুদের মধ্যে জিনগত মিল অনেকটা দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের সঙ্গে বিদ্যমান মিলের মতো। প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস সাময়িকীতে এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল।

‘বন্ধুত্ব’ ব্যাপারটা সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। বন্ধুত্ব সম্পর্ককে সহজ করে। বলেকয়ে বন্ধুত্ব হয় না। মনের সঙ্গে মনের মিল হলেই শুধু সত্যিকারের বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্বে অহংকার ও হিংসার স্থান নেই। ‘বন্ধুত্ব’ এমন একটা বিষয়, যা অনেক ক্ষেত্রে জীবনের চেয়েও দামি হয়ে দাঁড়ায়। এমন নজির পৃথিবীতে বহু আছে। বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক যাতে এক বন্ধু বিপদে পড়লে আরেক বন্ধু না জেনেবুঝেও আগুনে ঝাঁপ দিতে পারে।

তবে আজকাল এমন বন্ধুর সংখ্যা খুব বেশি নেই। এ সময়ে সত্যিকারের বন্ধু পাওয়া বা থাকা দুটোই ভাগ্যের ব্যাপার। কোনো কিছু পাওয়া যেমন কঠিন, তেমনি কাছে রাখার গুণটাও জরুরি। মনে রাখতে হবে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিচর্যার কোনো বিকল্প নেই। একপাক্ষিক কোনোকিছুই মজবুত হয় না। অবহেলা যে কোনো সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।

পৃথিবীর সব মানুষের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক। সবার বন্ধুরা ভালো থাকুক।