পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বর্তমান গভর্নিং বডিতে ‘অনাস্থা’ জানিয়ে তাদের বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষকরা। একই সঙ্গে গভর্নিং বডি গঠনে নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তারা বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর নাসরিন শবনম।
শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, ‘করোনাকালে আমাদের কলেজের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা ১১ কোটি টাকা গভর্নিং বডি আত্মসাৎ করেছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নামে টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হোস্টেল থেকে আদায়কৃত টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের ১ কোটি টাকাও আত্মসাৎ হয়েছে। ড্রেসের নাম করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিনা রশিদে টাকা নেওয়া হয়েছে। ভালো লেখকের বই বাদ দিয়ে গভর্নিং বডির যোগসাজশে সাবেক অধ্যক্ষ পছন্দের প্রকাশনীর লেখকের বই পাঠ্য করেছেন।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর যাবৎ তিনি এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। গভর্নিং বডিতে অন্য সব পদে কিছুটা পরিবর্তন এলেও সভাপতির পদটিতে গত ১৪ বছর কোনো পরিবর্তন আসেনি।’
এতে বলা হয়, ‘কিছুদিন আগে বিভিন্ন অনিয়ম করে ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট ও আত্মসাৎ করে সাবেক অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক তরুণ কুমার গাঙ্গুলী সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সুনাম চরমভাবে নষ্ট করেছেন। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও কতিপয় সদস্য প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকায় এগুলো কখনই প্রকাশ হয়নি এবং এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ ও অপর দুই শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতিগুলো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক তদন্তের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক তদন্ত কাজের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস ধরে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও আইনগত জটিলতায় আটকে আছে। এ তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত করতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন, যেখানে অন্য আরও ছয়জনের পাশাপাশি কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতিকে প্রতিপক্ষ করা হলেও অজানা কারণে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
বর্তমান গভর্নিং বডি বাতিল করে নতুন গভর্নিং বডি গঠনের ব্যবস্থা নিতে এবং তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় শিক্ষকদের পক্ষ থেকে।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের প্রভাষক মারুফ নেওয়াজের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হুদা, ইংরেজি বিভাগের সেগুপ্তা ইসলাম ও রাজু আহম্মেদ, ব্যবস্থাপনা বিভাগের নাজমুল ইসলাম প্রমুখ।
শিক্ষকদের পুরো বিবৃতি নিচে তুলে ধরা হলো:
১৯৬৯ সালে স্থাপিত আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত স্বনামধন্য একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি গত পাঁচ দশক ধরে আলোকিত জাতি গঠনে টেকসই শিক্ষায় তার অবদান রেখে আসছে। এই কলেজে বর্তমানে একুশটি বিভাগ, বিরাশি জন স্থায়ী শিক্ষক, পাঁচজন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক এবং প্রায় ষাট জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এখানে বর্তমানে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি পর্যায়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক পর্যায়ের আটটি বিষয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক পাঠ্যক্রমের বাইরে খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করে থাকে।
কলেজ গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি দীর্ঘ প্রায় ১৪(চৌদ্দ) বছর যাবত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন। কিছুদিন পূর্বে বিভিন্ন অনিয়ম করে ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাত হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট ও আত্মসাত করে তৎকালীন অধ্যক্ষ জনাব জসিম উদ্দীন আহম্মেদ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক জনাব তৌফিক আজিজ চৌধুরী, বাংলা বিভাগের শিক্ষক জনাব তরুণ কুমার গাঙ্গুলী সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সুনাম চরমভাবে নষ্ট করেছেন এবং তারা একাডেমিক দিক দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছিলেন। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও কতিপয় সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকায় কখনই এগুলো প্রকাশিত হয়নি এবং এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। এমনকি গভর্নিং বডির সভাপতি সাহেব সমাজে প্রভাবশালী হওয়ায় উক্ত দুর্নীতিবাজদের রক্ষার জন্য তিনি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে চলেছেন।
অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্থকৃত অধ্যক্ষ ও অপর দুই শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতিগুলো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক তদন্তের পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক তদন্ত কাজের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া দীর্ঘ প্রায় ০৫(পাঁচ) মাস ধরে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও আইনগত জটিলতায় আটকে আছে। এ তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মহামান্য হাইকোর্টে রিটপিটিশন দায়ের করেন, যেখানে অন্য আরও ছয়জনের পাশাপাশি কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতিকে প্রতিপক্ষ করা হলেও অজানা কারণে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমনকি কোন আইনজীবীও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কলেজ গভর্নিং বডির এহেন আচরণে আমরা বিস্মিত ও হতবাক। বর্তমানে জানতে পারা যায়, গভর্নিং বডির সভাপতির পরামর্শে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও আইনী জটিলতা তৈরি করে উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠানে পুনর্বহালের চেষ্টায় রয়েছেন। অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট করে অর্জিত অর্থ খরচ করে, গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে তদন্ত কাজ শেষ না করে তাদের পুনর্বহাল করার ষড়যন্ত্র আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না – মানব না। আমরা এ বিষয়ের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যবৃন্দ তাদের নিজ কর্মস্থল ও বাড়িতে প্রায়শ সাময়িক বরখাস্থকৃত অধ্যক্ষ ও অপর দুই শিক্ষকের সাথে মিলিত হয়ে সভা করেন এবং উক্ত সদস্যদের যোগসাজশে সাময়িক বরখাস্থকৃতদের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়িত হয় এমনকি অনেক ইস্যুতে গভর্নিং বডির সভার সিদ্ধান্ত, গভর্নিং বডির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই ঐসবস্থানে বসে কতিপয় সদস্যদের মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে যা পরবর্তীতে সভায় আনুষ্ঠানিক বৈধতা দেওয়া হয়। গভর্নিং বডির সভাপতি বয়োজেষ্ঠ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত গভর্নিং বডির অন্য সদস্যদের বিরোধিতায় এর উপরে তেমন কোন প্রভাব পরেনা। কলেজ গভর্নিং বডি শিক্ষক কর্মচারীদেরকে ভয়ভীতির মধ্যে রাখার জন্য ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে চারজন শিক্ষককে বিনা নোটিশে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিল, যা সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কলেজ গভর্নিং বডিতে প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি থাকেন। গত গভর্নিং বডিতে ২০১৭ সাল থেকে প্রায় চার বছর যাবত অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্থকৃত দুই শিক্ষক, অবৈধপন্থায় গভর্নিং-বডির ‘শিক্ষক প্রতিনিধি’ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালনের সময় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম করেছেন। আবার তারা গভর্নিং বডির সকলের সামনে এ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মগুলো আড়াল করায় তৎকালীন অধ্যক্ষকে সহযোগিতা করেছেন। বর্তমান গভর্নিং বডিতে থাকা ‘শিক্ষক প্রতিনিধি’ সদস্যরা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাদের অপমানিত ও হেনস্থা হতে হয়। গভর্নিং বডির কোনো কোনো সদস্যরা নিজেদের ‘এলিট শ্রেণী’ ও সম্মানিত শিক্ষক সমাজকে হেয় করে ‘কর্মচারী শ্রেণী’ বা শিক্ষক কাউন্সিলকে ‘সিবিএ’ বলে কটাক্ষ করেন। গভর্নিং বডির সভায় ‘শিক্ষক প্রতিনিধি’-দের হুমকি-ধামকি দিয়ে কথা বলা, বিভিন্ন ইস্যুতে কখনও কখনও একেবারেই কথা বলতে না দেওয়া, শিক্ষকদের নিয়ে অপমানসূচক মন্তব্য করা ইত্যাদি কোন গভর্নিং বডি সম্মানিত সদস্যদের আচরণ হতে পারে না। তাদের এহেন হীন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশকে আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
কলেজ গভর্নিং বডি বিগত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় তাদের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ দিতে না পারায় (উক্ত ব্যক্তি লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে না পারায়) ‘কাঙ্খিত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থী না পাওয়ার’ কারণ দেখিয়ে ঐ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে পুনরায় অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে গভর্নিং বডির যোগসাজশে জনাব জসিম উদ্দীন আহম্মেদকে ‘অধ্যক্ষ’ হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। উনিই বর্তমানে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে সাময়িকভাবে বরখাস্থ। একইরকমভাবে, ২০১৫ সালের নভেম্বরে কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে জনাব মোঃ মজিবুর রহমানকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়। উপাধ্যক্ষ পদের নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে কাঙ্খিত প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরে ঘষামাজা করা হয়েছে এবং নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সদস্যদের স্বাক্ষর বিশেষ কৌশলে জালিয়াতি করা হয়েছে। নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড কর্তৃক উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য কোন সুপারিশও করা হয়নি। পরবর্তীতে গভর্নিং বডির সভায় নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশ ছাড়াই উপাধ্যক্ষ পদে জনাব মোঃ মজিবুর রহমানকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসকল নিয়োগে গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যদের সাথে নিয়োগপ্রাপ্তদের বড় অঙ্কের লেনদেনের কথা জানতে পারা যায়।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের জন্য অনেক বিভাগেই পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়েও গভর্নিং বডির অনীহা ও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গভর্নিং বডি যে বিভাগে শিক্ষকের বেশী প্রয়োজন সেখানে নতুন নিয়োগ না দিয়ে খেয়ালখুশি মতো নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। কলেজ গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যদের যোগসাজশে ও তৎকালীন অধ্যক্ষসহ কিছু শিক্ষকদের অবৈধ সহযোগিতায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বিশাল পরিমানে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য চালানো হয়েছে। এমনকি নিয়োগপ্রাপ্তদের শিক্ষানবিশ কাল শেষে চাকুরী স্থায়ী করার সময়ও অনেক শিক্ষকদের নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণ করা হয়েছে।
কলেজ গভর্নিং বডির সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে (অর্থ কমিটি, সংস্কার কমিটি ইত্যাদি) অদৃশ্য কারণে সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন না করে অবৈধভাবে বিল পাস করা ও ভুয়া ভাউচারে অর্থ উত্তোলন করা ইত্যাদিসহ বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম করে কতিপয় দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদেরকে অর্থ লুট-পাট ও আত্মসাত করে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের চরম আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন। গতবছর পর্যন্ত একাদশ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সময় বাধ্যতামূলকভাবে বিনা রশিদে নগদ টাকার বিনিময়ে কলেজের ‘ইউনিফরমের কাপড় ও জুতা’ প্রদান করা হত। কলেজের দুর্নীতিগ্রস্থ কতিপয় শিক্ষক ও গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এখাত থেকে প্রায় ৫০/৬০ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জিত হত যা কতিপয় শিক্ষক ও গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিতেন। এবছরও এ বিষয়ে গভর্নিং বডির সভায় শিক্ষক প্রতিনিধিদের চরম বিরোধিতার কারণে গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যরা এ অনৈতিক সুবিধা নিতে পারেননি।
অনিয়ম ও দুর্নীতিকে আড়াল করার অভিপ্রায়ে ঐ বিষয়ক কলেজ গভর্নিং বডির সভার সিদ্ধান্ত ও কার্য বিবরণী (রেজ্যুলেশন) যথাযথ সংরক্ষণ করা হয়নি। তৎকালীন অধ্যক্ষ জনাব জসিম উদ্দীন আহম্মেদ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত হওয়া মোট ১১ টি রেজ্যুলেশন গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে সংরক্ষিত আছে বলে তার দায়িত্ব অর্পণের সময় বলেন, যা পরবর্তীতে আর পাওয়া যায়নি। সভাপতি সাহেবও সেগুলোর বিষয়ে কোন সদুত্তর দেননি। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ উপেক্ষা করে তিনি দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতা করেছেন। আরও অনেক বিষয়ের অঢেল আর্থিক দুর্নীতি আমাদের সামনে সংঘটিত হলেও আমরা শিক্ষক কর্মচারীরা এ গভর্নিং বডির সভাপতিসহ কতিপয় সদস্যদের কাছে অসহায় অবস্থায় আছি। গভর্নিং বডির অনেক সদস্য বিষয়গুলো অনুধাবন করলেও তারা গভর্নিং বডির সভায় তেমন ভূমিকা রাখার সুযোগ পান না। কলেজ গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি প্রভাবশালী ব্যাক্তি হওয়ার কারণে এসব বিষয়ে সুবিচার পাওয়া সম্ভব হয়না।
গভর্নিং বডির অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আমাদের অভিভাবক মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়কে স্মারকলিপির মাধ্যমে ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়কে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্যরা গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যদের অসদাচরণ, প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজে কথা বলতে ও অবদান রাখতে সুযোগ না দেওয়ায় গভর্নিং বডির সদস্য পদ থেকে ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন। ঢাকার সুপ্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য বর্তমান গভর্নিং বডি বাতিল করে নতুন গভর্নিং বডি গঠনের ব্যবস্থা নিতে এবং তাদের দ্বারা সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে জোর দাবী জানাচ্ছি।
এমতাবস্থায়, দুর্নীতিগ্রস্থ বর্তমান গভর্নিং বডির পরিচালনায় আমরা আইডিয়াল কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সকল রকমের কার্যক্রমে অংশগ্রহন করতে অপারগতা প্রকাশ করছি। আইডিয়াল কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানকে বর্তমান গভর্নিং বডির বিষাক্ত থাবা থেকে মুক্ত করতে আইডিয়াল কলেজের বর্তমান গভর্নিং বডিকে ‘অনাস্থা’ জানিয়ে তাদের বর্জন করার এবং গভর্নিং বডি শিক্ষকদের জোরপূর্বক কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সকল কার্যক্রমকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিচ্ছি।
Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। আপনিও লিখুন।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net