অ্যাসিস্টেড কনসেপশন : নিঃসন্তান দম্পতিদের জন্য যেভাবে কাজ করে এই পদ্ধতি

::
প্রকাশ: ২ years ago

পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক: 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ‘অ্যাসিস্টেড কনসেপশন’ পদ্ধতির সহায়তায় পৃথিবীতে গত তিন দশকে পঞ্চাশ লাখের মতো শিশু জন্ম নিয়েছে। যখন বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে অন্য কোনো ধরনের চিকিৎসায় আর কাজ হচ্ছে না, নিঃসন্তান দম্পতিদের জন্য তখন সন্তান ধারণের সর্বশেষ উপায় এটি।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা এনএইচএস বলছে, প্রাকৃতিক বা জৈবিক উপায়ে যখন সন্তান ধারণ সম্ভব হয় না তখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রযুক্তির সহায়তায় সন্তান ধারণ, সেটিই হচ্ছে অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকশন বা কনসেপশন।

কী পদ্ধতি বাংলাদেশে আছে?
বাংলাদেশে গত দশকের গোঁড়ার দিকে প্রথম চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই প্রযুক্তি চালু হয়েছে। প্রায় ২০ বছরে বাংলাদেশে ১০টির মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেখানে ‘অ্যাসিস্টেড কনসেপশন’ সহায়তা পাওয়া যায়। সরকারি দুটি হাসপাতালে এই সেবা চালু করার চেষ্টা চলছে।

ঢাকার হার্ভেস্ট ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকের এমব্রায়োলজিস্ট ডা. মুশতাক আহমেদ বলছেন, দু’রকম অ্যাসিস্টেড কনসেপশন রয়েছে। একটি হচ্ছে ‘আর্টিফিশিয়াল ইনসেমিনেশন’ যাতে পুরুষের অণ্ডকোষ থেকে তার শুক্রাণু সুঁই দিয়ে বের করে নারীর গর্ভাশয়ে বসিয়ে দেয়া হয়।

আর দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে, আইভিএফ যাতে নারী ও পুরুষের দেহ থেকে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ করে, কৃত্রিম পরিবেশে তা নিষিক্ত করে জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা বা টেস্টটিউব বেবির ব্যবস্থা।

কখন এটি করা হয় :
বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি গাইনী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, যদি কোন নারীর ডিম্বনালী বন্ধ থাকে তখন ডিম বের হতে পারে না। ইউটেরাসে কোন টিউমার, ফাইব্রয়েড হলে অনেক সময় গর্ভাশয়ে ভ্রূণ স্থাপন হতে বাধা দেয়।

ওভারিতে সিস্ট, এন্ডোমেট্রোসিস বা পলিসিস্টিক ওভারি থাকলে অনেক সময়ে ল্যাপারোস্কোপি, হিস্টিরিয়োস্কোপি করা হয়। তাতেও যদি কাজ না হয় তখন এসব ক্ষেত্রে আইভিএফ করা হয়ে থাকে। এছাড়া কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, বহু বছর চিকিৎসা করা হয়েছে তবুও সন্তান ধারণ সম্ভব হয়নি সেক্ষেত্রেও এটি করা হয়ে থাকে।

ডা. মুশতাক আহমেদ বলছেন, যদি কোন কারণে পুরুষের নালির কোথাও বাধা সৃষ্টি হয়েছে তাই শুক্রাণু গিয়ে ডিম্বাণুর সাথে মিলতে পারছে না। অনেক সময় শুক্রাণু থাকে কিন্তু পরিমাণে কম থাকে। আবার শুক্রাণুর পরিমাণ ঠিক আছে কিন্তু মান ঠিক নেই বা দুর্বল। যার ফলে সে ডিম ফার্টিলাইজ করতে পারে না। আবার হয়ত প্রজনন অঙ্গে কোন ধরনের আঘাত, অস্ত্রোপচারের কারণে শুক্রাণু যেতে বাধা পাচ্ছে তখন স্পার্ম ইনসেমিনেশন করা হয়।

যেভাবে করা হয়
সাধারণত একজন নারীর শরীরে দুই মাসিকের মাঝামাঝি সময়ে একটি করে পরিপক্ব ডিম তৈরি হয়। আইভিএফ করা হলে নারীর শরীরে হরমোন ঔষধ দিয়ে বেশি সংখ্যায় ডিম তৈরি করা হয়। সেগুলো কৃত্রিম উপায়ে বের করে আনা হয় এবং পুরুষের শুক্রাণুর সাথে ডিম নিষিক্ত করে ভ্রূণ তৈরি করা হয়।

অনেক ক্ষেত্রে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু একসাথে রেখে দেয়া হয়। যদি শুক্রাণুতে দুর্বলতা থাকে তখন ডিম্বাণুর ভেতরে শুক্রাণু ঢুকিয়ে দেয়া হয়। সেগুলো শরীরের বাইরে পাঁচ দিন রেখে দেয়া হয়।

ডা. আহমেদ বলেন, যদি আটটা বা দশটা ভ্রূণ হলো তার মধ্যে থেকে দুটি নারীর গর্ভাশয়ে বসিয়ে দেয়া হয়। আর বাকিগুলো আমরা হিমায়িত অবস্থায় রেখে দেই। যাতে প্রথমবার সফল না হলে ওই হিমায়িত ভ্রূণ আবার বসিয়ে দেয়া যায়।

শুক্রাণু প্রতিস্থাপনের জন্যে পুরুষকে ঔষধ দেয়া হয় শুক্রাণুর মান ভাল করার জন্য। পর্যাপ্ত বীর্য যাতে পাওয়া যায় সেজন্য কয়েকদিন যৌন মিলন না করার পরামর্শ দেয়া হয়। শুক্রাণু প্রতিস্থাপন করা হয় নারীর ডিম্বাণু তৈরির সময়ে।

শুক্রাণু বের করে তাতে কোন ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকতে পারে সে কারণে তা ল্যাবে পরিষ্কার করা হয়, নারীর ডিম্বাণু তৈরির সময়ে তা টিউবের মাধ্যমে তার জরায়ুতে বসিয়ে দেয়া হয়।

এর যেসব ঝুঁকি রয়েছে
ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, সব কিছুরই ঝুঁকি রয়েছে। তবে অ্যাসিসটেড কনসেপশনে কারো শরীরের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। মৃত্যু হয়েছে, এমন ঘটনা খুবই বিরল। তবে আইভিএফ করার সময় যেহেতু নারীকে অনেক হরমোন দিয়ে ডিম বাড়ানো হয় এবং সব ডিম বের করে ফেলা হয় এর ফলে পরবর্তীতে তার মাসিক লম্বা সময়ের জন্য বন্ধ ও অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। তার পায়ে পানি জমতে পারে। শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেক সময় নারীরা এসব হরমোন ঔষধের কারণে মোটা হয়ে যেতে পারেন। এটা করার সময়ই আমরা সব কিছু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করি।

কারো কারো ক্ষেত্রে মেনোপজ আগে হয়ে গেছে এমনটা শোনা গেছে।

এনএইচএস বলছে, কোন নারীর শরীর ডিম বৃদ্ধির ঔষধে সংবেদনশীল হলে তার ‘ওভারিয়ান হাইপারস্টিমিউলেশন সিন্ড্রোম’ হতে পারে। এর ফলে তার ওভারি অনেক বড় হয়ে যায় এবং সে খুব ব্যথা বোধ করে।

অনেক সময় গর্ভাশয়ের বদলে ভ্রূণ নিজেকে ‘ফ্যালোপিয়ান টিউবে’ প্রতিস্থাপন করে ফেলতে পারে।

আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রায়শই দুই বা তার বেশি সন্তান জন্ম হতে পারে। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।

আইভিএফ করার সময় নারীকে যে ঔষধ দেয়া হয় তার কারণে হঠাৎ গরম লাগা, মাথা ব্যথা, বিষণ্ণতা হতে পারে।

আর এর মানসিক চাপ তো রয়েছেই। প্রতিস্থাপন সফল হল কি হল না সে নিয়ে উদ্বেগ বোধ করেন অনেকে।

খরচ কত
বাংলাদেশে আইভিএফ করার খরচ তিন লাখের মতো। সেজন্য যেসব ঔষধ দেয়া হয় তার জন্যেও প্রায় লাখ খানেক টাকা খরচ করতে হয়। আর শুক্রাণু প্রতিস্থাপনের খরচ ২৫ হাজারের মতো।

সূত্র : বিবিসি নিউজ