অসম্মানে সম্মান কমে, শ্রদ্ধায় বাড়ে সম্মান

:: মোহাম্মদ নবী আলম ::
প্রকাশ: ৪ সপ্তাহ আগে

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন বিষয়ে ১৬ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা একটি পরিপত্র জারি করে। পরিপত্রে উল্লেখ্য করা হয়, অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস এবং ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
আমার জানামতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর সত্তরটিরও বেশি জাতীয় দিবস পালন করা হয়। অন্তবর্তীকালীন সরকারের বাতিলকৃত আটটি দিবস বাদে যেসব দিবস পালন করা হয় তারমধ্যে কয়েকটি দিবস যেমন, ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস (মুক্তিযুদ্ধকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে দশ মাস কারাভোগের পর ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ফিরে আসা উপলক্ষে এই দিবসটি পালিত হয়), ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা ইশারা ভাষা দিবস, ১২ ফেব্রুয়ারি আলিঙ্গন দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস, ৪ মার্চ টাকা দিবস, ২৩ মার্চ পতাকা উত্তোলন দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস, ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস (১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর বৈদ্যনাথতলায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিপ্লবী সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল), ১৬ মে ফারাক্কা লংমার্চ দিবস, ৪ জুন জাতীয় চা দিবস, (বঙ্গবন্ধু প্রথম বাঙালি হিসেবে এই তারিখে চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন), ৭ জুন ছয় দফা দিবস (তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালের এই তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ৬ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় নিহত হন অন্তত ১১জন, তাঁদের স্মরণে এবং জাতীয় মুক্তির স্বারকস্বরূপ এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে), ১৩ জুন নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস বা ইভ টিজিং প্রতিরোধ দিবস, ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস, ২৭ আগস্ট দিঘলিয়ার দেয়াড়া গণহত্যা দিবস, ২৩ সেপ্টেম্বর কন্যা দিবস, ২ অক্টোবর জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস, ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস বা স্বৈরাচার বিরোধী দিবস, ১৫ নভেম্বর রেল দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস সহ আর নানা দিবস।
আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের কারণ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের বক্তব্য, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার এসব দিবস চাপিয়ে দিয়েছিল। জাতীয় দিবস বলতে এমন দিবস যেটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সবাই ধারণ করবে। যেমন, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিছু দিবসকে বাতিল করা হয়েছে। পরবর্র্তিতে প্রয়োজন হলে আরও এমন দিবস বাতিল করা হবে। আওয়ামী লীগ ইতিহাসকে নষ্ট করে ফেলেছে। শেখ মুজিবুর রহমানকেও তো আওয়ামী লীগই নষ্ট করে ফেলেছে। যেভাবে তার মূর্তি করে তার পূজা বাংলাদেশে শুরু করেছে, এটা একটা ফ্যাসিস্ট আইডিওলজির অংশ হয়ে গেছে। একটা গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে যে সরকার, যে নতুন বাংলাদেশ সেখানে তো আমরা এই ফ্যাসিস্ট প্রবণতাগুলো রাখতে পারি না।’
উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম তাঁর দৃষ্টিকোণ ও অবস্থান থেকে তিনি আটটি দিবস বাতিল করার যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। পতিত শেখ হাসিনা সরকারের ফ্যাসিস্ট আইডিওলজির কোনো অংশই পালন করা সমীচীন নয়, তাঁর এই কথার সাথে আমার কোনো দ্বিমত নাই। শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার ‘আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুকে’ পরিবারতন্ত্র করে ফেলেছিল। গত পনেরো বছরে পতিত হাসিনা সরকার যা করেছিল এ দায় তো আওয়ামী লীগ এবং দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সমর্থদের নয়। এই দায় শুধুই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নামধারী কতিপয় কিছু হাইব্রিড ব্যক্তি ও তাঁর দোসরদের। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের প্রাচীনতম একটি রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের একটি আদর্শ আছে। রয়েছে দলের আদর্শে বিশ^াসী হাজার হাজার নেতা-কর্মী। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দায় কেনো আওয়ামী লীগের ওপর বর্তাবে? গত পনেরো বছর শেখ হাসিনা ছিল হাইব্রিড নেতা-কর্মী, আমলা ও ব্যবসায়ী নির্ভর। তিনি জাতীয় সংসদকে ভোটবিহীন হাইব্রিড সংসদ সদস্য, আমলা ও ব্যবসায়ীদের ক্লাবে পরিণত করেছিলেন। সেইসাথে তিনি আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রিয় কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের পদগুলোতে পরিবারের অযোগ্য ব্যক্তি ও আত্মীয়স্বজনদের স্থান দিয়ে ‘রামরাজত্ব’ করেছিলেন। এমনকি শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধকে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অবদান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করারও চেষ্টা করেছিলেন। বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে শেখ কামাল, বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ও শেখ রাসেলের জীবনের ঘটনা তুলে ধরতে ৫ আগস্ট শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী ও ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস সরকারিভাবে পালন করতে এই দিনগুলোকে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়েছিল। তবে এই দিনগুলোতে কোনো সরকারি ছুটি ছিল না। শেখ হাসিনার পরিবার কেন্দ্রিক এই দিবসগুলো বাতিল করায় আমার মনে বিন্দু পরিমাণ অসন্তোষ নাই, বরং দিবসগুলো বাতিলে সরকারি যে পরিমাণ অর্থ অপচয় ও সময় নষ্ট হতো তা লাঘব হবে।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ নিয়ে তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের একটি মন্তব্য ‘৭ মার্চ গুরুত্ব¡পূর্ণ হলেও তা জাতীয় দিবসের গুরুত্ব¡ পায় না।’ তাঁর এমন মন্তব্য আমার কাছে বেশ উদ্বেগের। এই মন্তব্য একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত, না অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের- এই প্রশ্ন আমার মতো হয়তো অনেকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বর্জ্রকণ্ঠের ভাষণ বাঙালি জাতির স্বাধীনতার যুদ্ধের একটি মাইলফলক ও ঐতিহাসিক দলিল। এই ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়। আম-জনতার কাছে এই ভাষণটি ছিল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণা। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর তেজোদীপ্ত এই ভাষণ শোনার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ দলে দলে পায়ে হেঁটে, বাস, লঞ্চ ও ট্রাকে চেপে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমবেত হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষের স্রোতে সেদিন ভরপুর হয়ে যায় রেসকোর্সের বিশাল ময়দান। আঠারো মিনিটের বঙ্গবন্ধুর অলিখিত এই ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ভাষণ হিসেবে বিবেচিত, যা পরবর্তিতে ইউনোস্কো বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মূলকথা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ছিল স্বাধীনতার ‘বীজমন্ত্র’ এবং সশ্রস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা। পশ্চিম পাকিস্তানীদের পরাধীনতার শিকল ভেঙে বাঙালির কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের এক মহৎ অধ্যায় ৭ মার্চ। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বাঙালির প্রাণের স্পন্দন, সেই দিনটি জাতীয় দিবসের গুরুত্ব¡ পায় না। অথচ ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা ইশারা ভাষা দিবস, ১২ ফেব্রুয়ারি আলিঙ্গন দিবস, ৪ মার্চ টাকা দিবস, ৪ জুন জাতীয় চা দিবস, ২ অক্টোবর জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস জাতির জীবনে কতটুকু গুরুত্ব বহন করে, যা বহাল রেখে অন্তবর্তীকালীন সরকার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বাতিল করে জাতিকে কি বার্তা দিচ্ছেন তা আমার বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ যারা করেন তারাই শুধু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, অন্যেরা নয়- এমনভাবাটাই চরম ভুল। একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী ছাড়া দেশের সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, ৭ই মার্চের ভাষণ শুনলে এখনও তাদের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়, চোখ জলে ভরে ওঠে।
সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দলিল। সংবিধানকে রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবিও বলা হয়। ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্ত দিয়ে লেখা সংবিধান ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত হয়। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের চেতনা জাগ্রত রাখতে এবং অনাগত প্রজন্মের কাছে সংবিধান লালন ও বিকাশে দিনটিকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে পালন করা উচিত বলে মনে করি। অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত খুবই আক্ষেপের।
‘এই ভূখন্ডে অনেকের ভূমিকা আছে, অনেকেই লড়াই করেছেন। এটিকে একটি দলে, একজন ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ করতে চাই না।’ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এই কথাটা সঠিক। শুধুমাত্র একটি দল, এক ব্যক্তির একক ভূমিকায় ও লড়াইয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় নাই। মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষ চার নেতা-সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়া, বঙ্গবন্ধুর ডাকে একাত্তরের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে বঙ্গবীর মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষক বীর উত্তম মেজর জিয়াউর রহমান, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। সর্বোপরি, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীসহ অনেক মানুষের লড়াইয়ের অবদানের ফল এই ভূখল্ড, এই রাষ্ট্র, আমাদের স্বাধীনতা। দেশের আঠারো কোটি মানুষ এই চরম সত্য অনুধাবন করেন এবং মনে প্রাণে বিশ^াসও করেন। ‘বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে যা শুরু করেছিলেন হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীর স্নেহধন্য এবং মওলানা ভাসানীর পুত্রতুল্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার মাধ্যমে তা সমাপ্ত করেন। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের কবল থেকে দেশ স্বাধীন করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের ভূমিকা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। স্বাধীন বাংলাদেশে ’৭৫ এর পনেরো আগস্ট বঙ্গবন্ধু দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধিকার আন্দোলন এবং অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধু কোনো দল বা গোষ্ঠী বা ব্যক্তির একক সম্পদ নয়, তিনি দেশের সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ। গত পনেরো বছরে মানুষ ঘুম, হত্যা, অত্যাচার, নির্যাতন, অর্থলোপাট, দুর্নীতি হয়েছে সেগুলোর দায় পতিত শেখ হাসিনা সরকার ও তাঁর দোসরদের। কারো ব্যক্তিগত দায়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বাতিলের পরিপত্র জনমনে এক বিরাট প্রশ্ন (?) বোধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অমর একুশে ২০২৪ বইমেলায় আমার লেখা ‘মনকথন’ বইটি প্রকাশিত হয়। বইটির ৫৪ পৃষ্ঠায় শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা করে লিখেছিলাম ‘পাঠ্যবইতে সরকার পরিচালনায় নারী শিরোনামে বিষয়বস্তুতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, শিক্ষামন্ত্রীর নাম ছবিসহ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা যেভাবে করা হয়েছে, তদ্রুপভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী…..এঁর নাম ছবিসহ বর্ণনা থাকলে হয়তো এতটা সমালোচনা হতো না। বরং সর্বমহলে প্রশংসিত হতো। ইতিহাস থেকে সত্যকে কখনো আড়াল করা যায় না, বরং সত্য আরও দৃঢ় হয়।’
বঙ্গবন্ধুর পরিবারকেন্দ্রিক কয়েকটি দিবসের সঙ্গে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, জাতীয় শোক দিবস ও জাতীয় সংবিধান দিবসকে গুলিয়ে ফেলার কোনো অবকাশ নেই। অন্তবর্তীকালীন সরকারের বঙ্গবন্ধুর পরিবারকেন্দ্রিক জাতীয় দিবসের সঙ্গে ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট ও ৪ নভেম্বর উদযাপন দিবসগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত জনগণের মাঝে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বরং প্রশ্ন তোলা উচিত শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী ও শেখ রাসেল দিবস এই তিনটি দিবসকে কেনো জাতীয় দিবস করা হয়েছিল।

 

লেখক: মোহাম্মদ নবী আলম, কলামিস্ট ও সাংবাদিক।

 


[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]