লিওনেল মেসি, আরলিং হালান্ড ও কিলিয়ান এমবাপ্পে, লড়াইটা ছিল তিনজনের মধ্যে। গেল বছরের হিসেবে এমবাপ্পে ছিটকে গেলে লড়াই জমে উঠে দুই তারকা মেসি ও হালান্ডের মধ্যে। তাতে নরওয়ের তারকাকে পেছনে ফেলে অষ্টমবারের মতো ব্যালন ডি’অর জিতলেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া মেসি।
এর মাধ্যমে আরও ভারী করলেন নিজের রেকর্ড, অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন নিজেকে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে মেসির হাতে তুলে দেওয়া হয় ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’-এর বর্ষসেরার পুরস্কার ব্যালন ডি’অর। এ নিয়ে অষ্টমবার পুরস্কারটি জিতলেন মেসি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচবার জিতেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
এ বছর লড়াইয়ে রোনালদো ধারকাছেও ছিলেন না। এবার জয়ের ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে মেসির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শুধু হালান্ড। গেল মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির ট্রেবল জয়ে বড় অবদান ছিল তার। লিগে ৩৭ ম্যাচে ৩৬ গোল ছাড়াও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পথে ১১ ম্যাচে গোল করেন ১২টি।
তবে মেসির এক বিশ্বকাপ জয়ের কাছে টিকলো না হালান্ডের এসব রেকর্ড। গেল মৌসুমটা জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত কাটিয়েছেন মেসি। ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছেন ইন্টার মায়ামি তারকা। আসর জুড়ে খেলেছেন দুর্দান্ত।
প্রথম ফুটবলার হিসেবে তিনটি ভিন্ন ক্লাবে থাকাকালে ব্যালন ডি’অর জিতলেন মেসি। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার (এমএলএস) লিগের ক্লাব মায়ামির হয়ে তো বটেই, ইউরোপের বাইরের কোনো ক্লাবের হয়ে এই পুরস্কার জেতা প্রথম ফুটবলার তিনি। এর আগে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা ও ফরাসি ক্লাব পিএসজির হয়ে মোট সাতবার (২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯ ও ২০২১) ব্যালন ডি’অর বগলদাবা করেন লা পুল্গা।
অথচ গত বছর ব্যালন ডি’অর জয়ের লড়াইয়ে মনোনয়ন পাওয়া ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেই ছিলেন না মেসি। কারণ ২০২১ সালে বার্সাকে বিদায় বলে পিএসজিতে যাওয়ার পর সেখানে প্রথম মৌসুমে একেবারেই সাদামাটা ছিলেন তিনি। সেই ধাক্কা সামলে এবার তিনি ফিরলেন ও জয় করলেন।
চলতি বছর সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা মেলেনি পর্তুগাল ও সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরের ফরোয়ার্ড ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর। ব্যালন ডি’অর জয়ের পরিসংখ্যানে মেসির পরেই তার অবস্থান। তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই পুরস্কার জিতেছেন।
কাতার বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে জোড়া গোলসহ আসরে মোট ৭ গোল করেন মেসি। জেতেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব ‘গোল্ডেন বল’। পিএসজির জার্সিতে দ্বিতীয়বারের মতো জেতেন লিগ ওয়ানের শিরোপা। তাতে সব মিলিয়ে মেসিই এগিয়ে ছিলেন যোজন-যোজন।
ফুটবলারদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগত পুরস্কার হলো ব্যালন ডি’অর। প্রতি বছর ফুটবল বিষয়ক সাময়িকী ফ্রান্স ফুটবল এই সম্মাননা দিয়ে থাকে। ১৯৫৬ সালে এটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। এবার হলো ৬৭তম ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠান। কালের পরিক্রমায় এটি পরিণত হয়েছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফুটবলের সর্বোচ্চ পুরস্কারে। ১৯৯৪ সালের পর ইউরোপে খেলা বিশ্বের যে কোনো খেলোয়াড়কে দেওয়া হতো। ২০০৭ সাল থেকে এই নিয়ম পরিবর্তন এনে পুরস্কারটি দেওয়া শুরু হয় সব মিলিয়ে বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে।
এবারের ব্যালন ডি’অরের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে ২০২২ সালের ১ অগাস্ট থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়সীমাকে।
হালান্ড জিতলেন ‘গার্ড মুলার ট্রফি’:
ব্যালন ডি’অরের লড়াইয়ে লিওনেল মেসির কাছে হার মেনেছেন নরওয়ে ও ম্যানচেস্টার সিটি তারকা আরলিং হালান্ড। তবে প্যারিসের ঝলমলে মঞ্চ থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়নি তাকে। ক্লাবের হয়ে গেল মৌসুমে দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স দেখিয়ে সর্বোচ্চ গোলের পুরস্কার ‘গার্ড মুলার ট্রফি’ জিতে নিয়েছেন তিনি।
গেল মৌসুমে হালান্ড ছিলেন দুর্দান্ত। ক্লাবের হয়ে স্রেফ গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন। জোড়া গোলে সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগ অভিষেক রাঙানোর পর লিগে ৩৫ ম্যাচে তিনি করেন ৩৬ গোল, অ্যাসিস্ট ৮টি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৩ ম্যাচে হলান্ডের গোল ছিল ৫২টি, অ্যাসিস্ট ৯টি।
এই তো গেল ক্লাবের হিসেব। ক্লাবের সঙ্গে জাতীয় দল যোগ করলে গোলের সংখ্যা দাঁড়ায় আরও বেশি। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে মোট ৫৬ গোল করেন হালান্ড। এছাড়াও ম্যানসিটির হয়ে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, এফএ কাপ ও প্রিমিয়ার লিগ মিলিয়ে ‘ট্রেবল’ জেতেন তিনি।
এই লড়াইয়ে হালান্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। হলান্ডের চেয়ে এক গোল কম হওয়ায় পুরস্কারটি জিততে পারেননি এমবাপ্পে।এবার কিছুই জিততে পারেননি বিশ্বকাপজয়ী তারকা।
উল্লেখ্য, জার্মানির কিংবদন্তি ফুটবলার গার্ড মুলারের নামে ২০২১ সালে থেকে এই পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। ২০২১-২২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার জিতেছিলেন সেই সময়ে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে পোল্যান্ডের ফরোয়ার্ড রবার্ট লেভানডোভস্কি।