হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে আদানি সাম্রাজ্যের পতনের পর বাংলাদেশে তাদের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কলকাতার আদানি গ্রুপের কর্মকর্তারা বরাবরই বলে আসছিলেন, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ যেতে কোনও সমস্যা হবে না। বাস্তবে এমনটা হয়েছে, একটু দেরিতে হলেও গত বৃহস্পতিবার রাতে ঝাড়খন্ডের গোড্ডা থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে গেছে ।
শনিবার সরবরাহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫০ মেগাওয়াটে। আদানি তার কথা রক্ষা করেছিলেন। ঝাড়খন্ডের গোড্ডা এখন ব্যস্ত। অনিশ্চয়তার ঢেউয়ের কবলে পড়া প্ল্যান্টটি এখন পুরোদমে চলছে। বড় বড় টারবাইন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যে পাইপলাইনেরর মধ্য দিয়ে এই বিদ্যুৎ যাচ্ছে তা পূজার সিঁদুর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
১৪ দিনের ফিজিবিলিটি টেস্টের পর বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম ডেলিভারি এলে প্রত্যেক কর্মী উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। লাড্ডু বিতরণ করা হয়। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড শুধুমাত্র ভারতের সাথে আন্তঃসীমান্ত তাপ বিদ্যুৎ চুক্তির সাথে আবদ্ধ।
পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
তারা ভারত থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা হয়ে এবং ত্রিপুরার সূর্যমনি থেকে কুমিল্লা হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ প্রবেশ করছিল। আদানির গোড্ডা প্রকল্প এই সরবরাহ শৃঙ্খলে আরেকটি মুকুট পালক। ভারতের আলোচিত আদানি গ্রুপ ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি করেছে। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের পর গতকাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে আদানি গ্রুপ। গত ৯ মার্চ থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দেশে বিদ্যুৎ আসছে। গত ১৪ দিনের নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা (নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা) গতকাল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে ভারতের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এখানে নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা সমগ্র উত্পাদন সুবিধায় পরপর ৭২ ঘন্টা পূর্ণ ক্ষমতাতে নিরবচ্ছিন্ন উত্পাদন অপারেশন বোঝায়। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) টেকনিক্যাল কমিটির উপস্থিতিতে এ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
তবে বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ (সিওডি) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। আরও কিছু প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে শীঘ্রই এটি ঘোষণা করা হবে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ এপ্রিল থেকে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলায় অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে গড়ে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গোড্ডায় ৪২৫ হেক্টর জমির উপর নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দিনের ব্যস্ত সময়ে ৬৮৫ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যার সময় ৭৪৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ভারতীয় সীমান্তে প্রায় ১০৬ কিলোমিটার ডেডিকেটেড ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আসছে ১,৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিট থেকে। আদানি গ্রুপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে দ্বিতীয় ইউনিটটি শীঘ্রই উত্পাদন শুরু করতে চলেছে। আদানির সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তির সময় পিডিবি প্রতি বছর প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৩৪ শতাংশ নিতে বাধ্য।
আদানি গ্রুপ গত ২ এপ্রিল এক বিবৃতিতে জানায়, ১৪ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা আনুমানিক ব্যয়ে নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমান কয়লার হারে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টায় ০.১৩৬৩ ডলার হবে। জ্বালানি খরচ প্রতি কিলোওয়াট-ঘন্টা $ ০.০৯৩৯ হবে এবং ক্যাপাসিটি চার্জ প্রতি কিলোওয়াট প্রতি $ ০.০৪২৪ হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আদানি গোড্ডা বলতে চান যে আদানি দ্বারা উত্পাদিত বিদ্যুতের দাম রামপাল, মাতারবাড়ি এবং এস আলম বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে বেশি হবে না।
আদানি গ্রুপ এবং পিডিবির মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুসারে, ইন্দোনেশিয়ার এইচবিএ সূচক এবং অস্ট্রেলিয়ান গ্লোবাল কোল নিউক্যাসল সূচকের গড় মূল্যের ভিত্তিতে গোড্ডার কয়লার দাম নির্ধারণ করা হবে।
শেয়ার দরপতনের পর ভারতীয় শিল্পপতি আদানির বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। অবশেষে আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করছে। আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির জন্য ঝাড়খন্ডে প্রায় ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট নির্মাণ করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ঢাকায় বলেছিলেন,মার্চে আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ। এছাড়া বিদ্যুতের দাম নিয়েও কোনো সমস্যা নেই। আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২৮ ফেব্রুয়ারি চালু হওয়ার কথা ছিল। ২০২৩ সালের মার্চের শুরুতে আদানি থেকে প্রথম ইউনিটে প্রায় ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর এপ্রিলে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে জানা যায়, আদানির বিদ্যুৎ বাংলাদেশে পৌঁছেছে। ভারতীয় গ্রুপের (আদানি গ্রুপ) আদানি পাওয়ারের (আদানি পাওয়ার) কাছ থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার ঘোষণা করেছে। গত দুই দিনে আদানি পাওয়ার বাংলাদেশকে প্রতি ঘণ্টায় ৭২০ থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডা এলাকায় আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৪৯৮ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে আদানি পাওয়ারের গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এসেছে। এটি আরও বাড়িয়ে ৭৫০ মেগাওয়াট করা হয়েছে। বিপিডিবির মুখপাত্র বলেন, চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গোড্ডা প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে মানসম্মত বিদ্যুৎ পাচ্ছে । বৃহস্পতিবার থেকে বাণিজ্যিক সরবরাহ শুরু করার আগে ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় আদানি পাওয়ার প্ল্যান্টে ১৪ দিনের নির্ভরযোগ্যতার সাথে পিক লোডে ৭২ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জন্য পরীক্ষা করা হয়েছিল।
পরীক্ষার আগেই সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ করে আদানি পাওয়ার ও বিপিডিবি। আদানি পাওয়ারের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ গ্রহণের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত থেকে বগুড়া সাবস্টেশন পর্যন্ত ১৩৪ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। বাংলাদেশ বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে। এটি পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে প্রতিদিন ১০ মেগাওয়াট এবং ত্রিপুরার সূর্যমণি থেকে কুমিল্লা হয়ে প্রতিদিন ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রহণ করে। ভারতই একমাত্র দেশ যার সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বাণিজ্য (সিবিইটি) রয়েছে।
লেখিকা: সুমাইয়া জান্নাত, নারী উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন কর্মী।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।
গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।
Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net