মানুষের কেন হাই ওঠে? এই নিয়ে অনেক দিন ধরে চিন্তাভাবনা করে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। হাই নিয়ে গবেষণাও প্রচুর হয়েছে। কিন্তু কেন আমাদের হাই ওঠে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কারণ এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। মানুষের পাশাপাশি অধিকাংশ মেরুদণ্ডী প্রাণীও হাই তোলে।
অতীতে মনে করা হতো, শরীরে অক্সিজেনের অভাব ঘটলে হাই ওঠে। কিন্তু এখন সেই ধারণা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। বরং ইদানীং মনে করা হয়, প্রাণীদেহে মস্তিষ্ক অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে, তা আবার ঠাণ্ডা হওয়ার প্রক্রিয়ায় হাই ওঠে। তাই ক্লান্তির সঙ্গে হাই তোলার সম্পর্ক আছে।
হাই তোলার সময় মুখে হাতচাপা দিতে বলা হয়। কারণ আমাদের মুখ থেকে যাতে কোনো জীবাণু বাইরে বার না হয়, অন্যদিকে বাইরের জীবাণু মুখগহ্বরের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ না করে। তাই এই সাবধানবাণী।
দিনভর কাজের পর ক্লান্তিতে ঘুম আসার আগে আমাদের হাই ওঠে। কারণ শ্রান্ত মস্তিষ্ক তখন তার তাপমাত্রা কমাতে চাইছে। কোনো কিছু একঘেয়ে লাগলে বা আগ্রহ নেই এমন কিছুর সামনে এলেও মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন আমরা হাই তুলি।
সকালে বা অন্য সময়ে আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি, তখন মস্তিষ্ক আমাদের জেগে ওঠার বার্তা দেয়। হাই তোলার ফলে ফসফুস ও তার টিস্যু টানটান হয়। সে কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা হাই তুলি।
শারীরবৃত্তীয় কারণ ছাড়া অন্য কাউকে হাই তুলতে দেখেও আমাদের হাই ওঠে। সেই কারণে হাই-কে বলা হয় পৃথিবীতে সবথেকে বেশি সংক্রামক। কেন একজনকে দেখেই বাকিরা হাই তোলে? এমনকি, হাইয়ের শব্দ শুনেও কারোর হাই উঠতে পারে। এর কারণও সুনিশ্চিত করা যায়নি। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, এর পেছনে আছে মূলত ‘এমপ্যাথি’। অর্থাৎ অন্যের প্রতি অবচেতনে থাকা সহানুভূতি ও সহমর্মিতা।
প্রাগৈতিহাসিক মানুষ যখন গুহামানব হয়ে দলবদ্ধ ভাবে গুহায় থাকত, তখন থেকেই চলে আসছে এই এমপ্যাথি রীতি। অর্থাৎ একজনকে কোনো কাজ করতে দেখেই বাকিদেরও সেই কাজে প্রবৃত্ত হওয়া।
আমাদের মস্তিষ্কের মিরর নিউরন আমাদের শেখায় কী করে অন্যদের অনুকরণ করা যায়। বা অন্যদের আচরণ রপ্ত করা যায়। হাই তোলার রীতিতে কার্যকর মিরর নিউরন। তবে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে অপরিচিতর তুলনায় পরিচিত কাউকে দেখেই আমরা বেশি হাই তুলি।
সূত্র: নিউজ বাংলা ১৮