২০ ফুট লম্বা ১৪ ফুট চওড়া একটা দোচালা টিনের ঘর, থাকার জন্য। আরেকটি ঘর প্রায় ১২ ফুট লম্বা ও চওড়ায় ১০ ফুট। এটা রান্না ঘর। আর চার বাই চার ফুটের একটা ল্যাট্রিন। এই নিয়ে একটি বসত বাড়ি। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা উত্তর কাউন্নারা গ্রামে চল্লিশ ডিসেমেল নিচু ফসলি (নাল) জমির ওপর এমন পাঁচটি বাড়ি।
সদ্য নির্মিত প্রতিটি বাড়ির সামনে লাগানো হয়েছে নারকেল, পেয়ারা, আমসহ বিভিন্ন ফল আর সবজি চারা। তবে কোনো বাড়িতেই মানুষজন থাকেনা। দেখে মনে হতে পারে আদর্শ বাড়ির প্রদর্শনী হচ্ছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেলো এটা আসলে অধিগ্রহণকৃত জমির অতিরিক্ত মূল্য পেতে এই কাণ্ড।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকার ধামরাই উপজেলার কালামপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা হয়ে টাংগাইল পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটির প্রসস্তকরণ ও উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এ জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য বাড়াতে এভাবেই নাল জমিকে ভিটি জমি হিসেবে দেখানোর জন্য রাতারাতি বসতবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। কেবল কাউন্নারা গ্রামের এই অংশটিই নয়। সাটুরিয়া উপজেলার যে যে অংশে আঞ্চলিক মহাসড়কের জন্য জমি অধিগ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে এমন অনেকস্থানেই এভাবে বাড়িঘর তোলা হচ্ছে। জানা গেছে, একটি দালাল চক্র এভাবে প্রতারণার জন্য অধিগ্রহণের আওতায় জমির মালিকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছে। এমনকি, অতিরিক্ত টাকা পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তার বিনিময়ে চুক্তিও করছে তারা।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ আঞ্চলিক মহাসড়কটি প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার-লাউহাটি-সাটুরিয়া-কাওয়ালীপাড়া-কালামপুর বাসস্ট্যান্ড সড়ক আঞ্চলিক মহাসড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে পেভমেন্ট নির্মাণ, আরসিসি রিজিভ পেভমেন্ট নির্মান আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ, সাইন, সিগন্যাল, কি.মি পোস্ট, রোড মার্কিং, রক্ষাপ্রদ কাজ করা হবে। ফলে এ সড়কের অংশে বেশ কিছু নতুন সেতু, কালভার্ট, রিটেনিং ওয়াল, ইউলুপসহ রাস্তা প্রশস্ত করা হবে। এজন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে প্রায় ৭৩ হেক্টর জমি। কিছুদিন আগে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া অংশে সড়ক ও জনপদ বিভাগ সার্ভে করে লাল নিশানা লাগিয়ে চিহ্নিত করে। এর পরপরই চিহ্নিত জমি মালিকদের অনেকে নাল জমিতে বাড়িঘর তোলা শুরু করেছেন। বাড়িঘর পুরনো দেখাতে কেউ নতুন টিন ব্যবহার করছেন না। খুঁজে খুঁজে বেশি দামে হলেও পুরনো টিন কিনে বাড়িঘর তৈরি করছে। সাটুরিয়া বাজারের একাধিক টিন ব্যবসায়ী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, গত দুই তিন মাস ধরে পুরনো টিনের বেশ চাহিদা।
জানা গেছে, ফজলুর রহমান ও সাজিব নামের দুজন সাটুরিয়ায় এসে জমির মালিকদের সাথে বৈঠক করে যাচ্ছেন। নিজেদের জমি অধিগ্রহণ বিভাগে চাকরি করেন বলে পরিচয় দিচ্ছেন। তারা অধিগ্রহণের আওতাভুক্ত জমির মালিকদের পরামর্শ দিচ্ছে ফসলি জমিতে বাড়িঘর তুলতে। এতে জমির দামের সাথে স্থাপনার জন্য অধিগ্রহণ বাবদ অতিরিক্ত টাকা পাইয়ে দেবে। অতিরিক্ত টাকার অর্ধেকটা তারা নেবে।
ঘটনাটি এখন সাটুরিয়ায় বহুল আলোচিত বিষয়। সংশ্লিষ্ট জমির মালিকরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে সাটুরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জমিতে রাতারাতি বাড়ি উঠে যাচ্ছে। অথচ বাড়িঘর নির্মাণের মত উপযোগীতা নেই। প্রায় জমিতেই চাষাবাদ হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে হয়ত পানিতে ডুবে যাবে। আবার ডোবা নালা ভরাট করে রাতারাতি বাড়িঘর উঠছে।
যোগাযোগ করা হলে মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আলম জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তিনি বলেন, এভাবে জমির দাম বাড়ানোর চেস্টা এক ধরনের অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, রাস্তার ম্যাপ করার সময় আমরা জমির ভিডিও রেকর্ড করে রেখেছি। জমি অধিগ্রহন বিভাগের (এল,এ) কাছে আমরা সেই ভিডিও রেকর্ড হস্তান্তর করবো। ও্ই ভিডিও দেখে জমি এবং স্থাপনার ক্ষতিপুরণ নির্ধারণ করলে কেউ ফাঁকিবাজি করতে পারবেন না।