হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ: এখন পর্যন্ত যা জানা গেল

:: পা.রি. ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ১০ মাস আগে
গাজায় এক লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত। ছবি: সংগৃহীত।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের আজ তৃতীয় দিন। গত শনিবার আকস্মিকভাবে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে হামাস। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে এ সংগঠনটি। শনিবার ভোর থেকে স্থল, জল ও আকাশপথে সমন্বিত হামলা করে তারা। জবাবে ইসরায়েলি সেনারাও নির্বিচারে হামলা চালায় ফিলিস্তিনে। তারা এটিকে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

এই যুদ্ধে আজ সোমবার পর্যন্ত যা ঘটেছে এবং ঘটছে তার কিছু সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

আজ তৃতীয় দিনে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে গোলাগুলি চলছে। এর মধ্যে কারমিয়ার কিববুৎজ এবং আশকেলন শহর ও সেদরতে ব্যাপক গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। হামাসের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজায় তারা এক শর বেশি ইসরায়েলিকে বন্দী করে রেখেছে। মুসা আবু মারজুক নামে হামাসের শীর্ষ এক কর্মকর্তা আরবি ভাষায় প্রকাশিত সংবাদমাধ্যম আলগহাদকে জানিয়েছেন, এসব বন্দীর মধ্যে ইসরায়েলের শীর্ষ কর্মকর্তাও রয়েছেন।

হামাসের আক্রমণ মোকাবিলায় শুরুতে ব্যর্থ হওয়া ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দেশটির বাসিন্দাদের সমালোচনার মুখে পড়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, তারা গাজা সীমান্তবর্তী বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে। তাদের হামলায় কয়েক শ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তারা অনেককে আটকও করেছে।

আরও পড়ুন: হামাস কারা, তাদের লক্ষ্য কী, কেন এই আকস্মিক হামলা

ইসরায়েল সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তার দেশ গাজা উপত্যকার কাছে এক লাখের মতো অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে।

এদিকে পশ্চিমা বিশ্বের দাবি ইরানের প্রত্যক্ষ মদদে হামাস এই হামলা চালিয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলে এমন আকস্মিক হামলায় ইরানের পক্ষ থেকে হামাসকে সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি মিশন বলছে, এই হামলার সঙ্গে তেহরান জড়িত ছিল না।

ইরানের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে আমরা দৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আমরা ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত নই, ফিলিস্তিন এককভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।’

ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধের বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ একটি জরুরি বৈঠকে বসেছিল। কিন্তু বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়নি। বৈঠকের পর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যৌথ কোনো বিবৃতিও দেওয়া হয়নি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েলকে সমর্থন প্রদর্শনের অংশ হিসেবে ইসরায়েলের কাছাকাছি তাদের একাধিক সামরিক জাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠানো হবে।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনির মিশন একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলছে যে ‘এমন পরিস্থিতি হুট করে ঘটেনি। এই বছর শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যার ফল এটি’।

হামাসের হামলার জবাবে গতকাল রোববার গাজায় বিভিন্ন বাসস্থান, টানেল, মসজিদ ও হামাসের কর্মকর্তাদের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। এতে এ পর্যন্ত ২০ শিশুসহ ৪০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে।

হামাস দাবি করছে তাদের আকস্মিক হামলায় প্রায় ৭০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। এ সময় তারা অনেক ইসরায়েলিকে অপহরণ করেছে বলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, ভবন ও অ্যাপার্টমেন্ট লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণের ফলে গাজায় প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৩৮ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১২ থাই নাগরিক এ যুদ্ধে নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৮ জন। আর মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলে হামলায় আমেরিকার চারজন নাগরিক মারা গেছেন। তবে এ প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।

এ ছাড়া ফ্রান্স দাবি করেছে এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত তাদের একজন নাগরিক মারা গেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, সংঘর্ষে তাদের দুজন নাগরিক মারা গেছেন। অন্যদিকে মেক্সিকো বলছে, ম্যাক্সিকান এক নারীকে অপহরণ করেছে হামাস।

এই যুদ্ধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে এশিয়ার জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি তান ডলার বেড়েছে আজ। তেলের সরবরাহ নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা বলেছেন, ইসরায়েলে অবস্থান করা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের নিরাপত্তা জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, তারা নানা রকমের বাধার সম্মুখীন হতে পারে। নিরাপত্তাজনিত কারণে এশিয়ার অনেক দেশ ইসরায়েলে তাদের ফ্লাইটও বাতিল করেছে ইতিমধ্যে।

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও। গতকাল তারা ইসরায়েলে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। জবাবে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও। ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, লেবাননের ওই এলাকা থেকে তাদের একটি সেনা স্থাপনা লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছিল। তারাও লেবাননে গোলাবর্ষণ করেছে।

ইসরায়েলি সেনাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, লেবাননের যে জায়গা থেকে গুলি চালানো হয়েছিল, সেখানে আঘাত শুরু করেছে ইসরায়েলি আর্টিলারি। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বিবৃতিতে বলা হয়নি।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তাদের একটি ড্রোন লেবাননের সীমান্তবর্তী মাউন্ট ডভ এলাকায় ‘একটি হিজবুল্লাহ অবকাঠামোয়’ আঘাত করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স প্ল্যাটফর্মে তারা এ কথা বলে।

আর হিজবুল্লাহ যদি হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে ইসরায়েল বিপাকে পড়বে। খোদ ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এই কথা বলছে। হারেৎজের সাংবাদিক জিডিওন লেভি বলেছেন, ‘আমরা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি হব, যদি ইসরায়েলকে দুটি ফ্রন্টে লড়াই করতে হয়। এবং সম্ভবত তিনটি, যদি অধিকৃত পশ্চিম তীরও দৃশ্যপটে চলে আসে। এটি একটি নতুন “খেলা” এবং ইসরায়েল এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে, যা এর আগে কখনো হয়নি।’ ইসরায়েলি স্থাপনা লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহর হামলার প্রতিক্রিয়ায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে তিনি এসব কথা বলেন।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলিদের কাছে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে গাজা উপত্যকায় হামলা চালালে এবং কোনো স্থল আক্রমণ শুরু করার অর্থ এই সংঘর্ষ অন্য দিকে মোড় নেবে।