বিধবার বয়স্ক ভাতা মেম্বারের বউয়ের পেটে

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৫ মাস আগে
মরিয়ম বেগম

বরগুনায় গত দুই বছর ধরে অসহায় বিধবা বৃদ্ধার বয়স্ক ভাতার টাকা পাচ্ছেন এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের স্ত্রী। এই ঘটনায় প্রতারণার শিকার ওই বৃদ্ধা মামলা করেছেন থানায়। পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও তার স্ত্রীসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে আদালতে।

বরগুনা সদরের নলটোনার সোনাতলা গ্রামের ৬৫ বছরের অসুস্থ্য বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম (৬২) এখন বিচারের জন্য ঘুরছেন আদালতের বারান্দায়।

অভিযোগ উঠেছে, ২০২১ সালে নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পনু মৃধাকে ১ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে মরিয়ম বেগম বয়স্ক ভাতার আবেদন করেন সমাজ সেবা অফিসে। ভাতা উপযুক্ত হওয়ায় দুই বছর মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা চালু হয় মরিয়ম বেগমের।

মরিয়ম বেগমের অভিযোগ, পনু মৃধা আবেদনপত্রে তার বিকাশ নম্বর না দিয়ে তার বাসার গৃহকর্মীর বিকাশ নম্বর দিয়েছেন। সিম গৃহকর্মীর নামে থাকলেও ব্যবহার করেন তার স্ত্রী তানজিলা এনি। প্রতি মাসের ভাতার টাকাও পাচ্ছেন এনি।

মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আমরা অশিক্ষিত মানুষ। আবেদনের সময় আমার বিকাশ নম্বর না দিয়ে পনু মেম্বার তার বউয়ের বিকাশ নম্বর দিয়েছে। দুই বছর ধরে আমার নামে ভাতা আসে, কিন্তু টাকা খায় পনু মেম্বারের বউ। আমি এখন অসুস্থ ওষুধ কেনার টাকাও নাই। শেখ হাসিনার দেয়া এই টাকাটা যদি আমি পেতাম তাহলে ওষুধ কিনতে পারতাম।’

স্বামী হারা মরিয়ম বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে ছোট মেয়ে কহিনুর ভুল বুঝিয়ে নিয়ে গেছেন বসতঘর ও ফসলি জমি। ছেলে ইউনুস তাড়িয়ে দিয়েছেন মাকে। তাই মরিয়মের ঠাঁই এখন বড় মেয়ে মমতাজের ঘরে। অভাবের সংসারে দুই বেলা খাবার দিতে পারলেও ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই তাদের।

মরিয়ম বেগমের বড় মেয়ে মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার ছোট বোন বাবার মৃত্যুর আগে সব জমি টিপ সই দিয়ে ভুল বুঝিয়ে তার নিজের নামে করে নিয়েছে। সেই ক্ষোভে ভাইও মাকে তাড়িয়ে দিয়েছে নিজের বাড়ি থেকে। আমার মাকে আমি ফেলতে পারিনি। মাকে আমি খাবার দিতে পারি কিন্তু, আমাদের ওষুধ কেনার সামর্থ্য নাই।’

এদিকে, মরিয়ম বেগমের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে আদালতে পনু মৃধা, তার স্ত্রী তানজিলা এনি ও গৃহকর্মী সোনা ভানুকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।

বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বয়স্ক ভাতার আবেদনের সময় বাদী মরিয়ম বেগমের দেওয়া বিকাশ নম্বর (০১৩০৪১৬৬৬২৬) না দিয়ে অভিযুক্ত পনু মেম্বারের বাড়ির গৃহকর্মী সোনা ভানুর নামের রেজিস্ট্রেশনকৃত বিকাশ নম্বর (০১৭৯২০৬০৫৩৪) যুক্ত করে দেন। এই সিম ব্যবহার হয়েছে পনু মেম্বারের স্ত্রী তানজিলা ইভার নিজের ব্যবহৃত ফোনে (আইএমইআই-১ : ৮৬৩৩২৮০৫৮৫১৮১৭৭, আইএমইআই-২ : ৮৬৩৩২৮০৫৮৫১৮১৮৫)। তদন্ত করে প্রতারণার সত্যতা পেয়ে পুলিশ পনু মৃধার বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।

বাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে বিনা পারিশ্রমিকে মামলা পরিচালনা করছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইমুল ইসলাম রাব্বি। তিনি বলেন, আদালত পনু মৃধার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন। এখন আমরা সাক্ষীদের সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করবো। আমরা আশাবাদী ন্যায় বিচার পাবো।

অভিযোগ অস্বীকার করে পনু মৃধা বলেন , এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না এবং মরিয়ম নামের কাউকে চেনেন না।

বরগুনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সহিদুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার বিষয়ে পৃথকভাবে তদন্ত করছেন তিনি।

 

তথ্যসূত্র: রাইজিংবিডি ডটকম।