দিনে ভিন্ন পেশা, রাতে করে ছিনতাই

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ১০ মাস আগে

দিনের বেলায় তারা কেউ গাড়িচালক বা হেল্পার, কেউ দোকানের কর্মচারী বা নির্মাণ শ্রমিক, কেউ ভাঙারি ব্যবসায়ী কিংবা সবজি বিক্রেতা। সন্ধ্যা নামতেই বদলে যায় তাদের পেশা ও পরিচয়। রাতে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে তারা।

তাদের মধ্যে ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বসিলায় র‌্যাব-২ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের এই ইউনিটের অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান।

তিনি জানিয়েছেন, শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে র‌্যাব-২ এর একাধিক দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি ‘কিশোর গ্যাং’ গ্রুপের সদস্যরা ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে। হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি ও মামলা হয়েছে। অতি সম্প্রতি মোহাম্মদপুর, আদাবর, হাজারীবাগ ও তার আশপাশের এলাকায় কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পেয়ে র‌্যাব টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।

ভিন্ন ভিন্ন পেশার আড়ালে মোহাম্মদপুর ও তার আশপাশের এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে তারা। প্রত্যেকের নামে আছে একাধিক মামলা। প্রত্যেকেই জেল খেটেছে। বেরিয়ে এসে আবারো জড়িয়েছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে।

গ্রেপ্তাররা কিশোর গ্যাং ‘পাটালি’ গ্রুপের অন্যতম হোতা সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিব এবং ‘লেভেল হাই’ এর অন্যতম হোতা মো. শরিফ ওরফে মোহন এবং ‘চাঁন গ্রুপ’ ও ‘মাউরা ইমরান গ্রুপ’সহ বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র।

জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৫ জন ‘পাটালি’ গ্রুপের, ৬ জন ‘লেভেল হাই’ গ্রুপের, ৬ জন ‘চাঁন গ্রুপ’-এর, ৫ জন ‘লও ঠ্যালা গ্রুপ’-এর এবং ৭ জন ‘মাউরা ইমরান গ্রুপ’-এর সদস্য। বাকি সাতজন অন্য গ্রুপের সদস্য।

র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক বলেছেন, পাটালি গ্রুপটি সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিবের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে তারা ২-৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়। ‘লেভেল হাই’ গ্রুপটি শরিফ ওরফে মোহনের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরৈ পরিচালিত হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতরা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম করত।

তারা রাস্তায় কাউকে একা পেলে আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় অস্ত্র নিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করত। মাদক সেবনসহ ও মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত তারা।

গ্রেপ্তার সুজন মিয়া ওরফে ফর্মা সজিব এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার জন্য ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করে। গ্রেপ্তার রানা শিকদার, জুয়েল মিয়া ও সাগর ফর্মা সজিবের সহযোগী। সজিবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১১টির বেশি মামলা আছে। সে বিভিন্ন মামলায় কারাভোগও করেছে।

গ্রেপ্তার শরিফ ওরফে মোহন (২১) লেভেল হাই গ্রুপের মূল হোতা এবং সন্ত্রাসী হায়াত ওরফে টাকলা হায়াতের অন্যতম প্রধান সহযোগী। আগে সে মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদকের ব্যবসা করত। সে টাকলা হায়াতের অন্যতম সহযোগী হিসেবে মোহাম্মদপুর ও তার আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি ও অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করত। টাকলা হায়াতের অবর্তমানে সে গ্যাং পরিচালনা করে। গ্রেপ্তার দুলাল, সোহাগ ও তারেক ‘লেভেল হাই’ গ্রুপের সদস্য। তারা শরিফ ওরফে মোহনের নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা করত। শরিফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত ৮টির বেশি মামলা আছে। এসব মামলায় সে কারাভোগ করেছে।

গ্রেপ্তার সাকিব ওরফে প্রকাশ রিয়াম ‘চাঁন গ্রুপের’ অন্যতম সদস্য। সে ২০১৮ সালে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে ঢাকা উদ্যান এলাকায় বসবাস শুরু করে। সে বিভিন্ন সময়ে পোশাক কারখানায় চাকরি করেছে। ২০২১ সালে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে চাকরির সময়ে ‘চাঁন গ্রুপ’-এর সঙ্গে জড়িয়ে পরে। বর্তমানে সে ‘চাঁন গ্রুপের’ অন্যতম সহযোগী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত ৩টির বেশি মামলা আছে এবং এসব মামলায় সে কারাভোগ করেছে।

ইমরান ওরফে মাউরা ইমরান ‘মাউরা ইমরান গ্রুপ’র হোতা। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৫-২০ জনের একটি গ্রুপ তৈরি করে সে। আগে মোহাম্মদপুর এলাকায় রাজমিস্ত্রী হিসেবে কাজ করত ইমরান। ২০২১ সালে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সময়ে কিশোর গ্যাং ‘মাউরা ইমরান গ্রুপ’ গঠন করে। মাউরা ইমরান মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও অপহরণের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত চারটির বেশি মামলা আছে এবং এসব মামলায় সে কারাভোগ করেছে।