চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকারী তরুণীকে হাসপাতাল থেকে অপহরণ

:: পা.রি. ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অনেক দিন ধরে ধর্ষণের শিকার এক নারীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলের (ওসিসি) সামনে থেকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে ওই নারীর স্বজন ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ফিল্মি স্টাইলে তাকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায় একদল লোক।

এ সময় অপহরণকারীরা যমুনা টিভি ও এসএ টিভির ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে দুই সাংবাদিক আহত হন।

মাইক্রোবাস চলে যাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদ আহমেদকে আটকে রাখে স্থানীয়রা। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এর আগে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের অভিযোগ করেন ওই তরুণী। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১১টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হন তিনি।

ওসিসির কো-অর্ডিনেটর ডা. সুমন রায় জানান, ডুমুরিয়ার ২৮ বছরের তরুণী রাত সোয়া ১১টার দিকে খুমেক হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরে তাকে ওসিসিতে রেফার্ড করা হয়। তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

হাসপাতালে ভর্তির পর ওই তরুণী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মধুগ্রাম কলেজে পড়ার সময় উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তিনি দীর্ঘ দিন আমার সঙ্গে অনৈতিক ব্যবহার করেছেন। পরে বিয়ের কথা বললেই টালবাহানা করছেন। আজও তিনি (শনিবার রাতে) আমার সঙ্গে অনৈতিক ব্যবহার করেছেন।’

তখন পাশে থাকা ওই তরুণীর ভাই অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান শনিবার রাতে মোবাইল ফোনে তার বোনকে শাহপুর এলাকায় ব্যক্তিগত অফিসে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অনেক দিন ধরে তার বোনকে ধর্ষণ করছেন। তিনি ডুমুরিয়া থানায় গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে আসা দুর্বৃত্তরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনা জেলা শাখার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মমিনুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, চিকিৎসাধীন একজন ধর্ষিতাকে তাৎক্ষণিক ছাড়পত্র দেয়া এবং তাকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক।

মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী আমার নেতৃত্বে ওই নারীর সঙ্গে কথা বলতে ওসিসিতে যান। ঠিক তখনই তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। বাইরে বের হলে ওই নারীর সঙ্গে তারা কথা বলার চেষ্টা করামাত্রই বহিরাগত লোকজন আমাদের উপর হামলা চালায় এবং জোর করে ওই তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।’

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মতো একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভিকটিম ও রোগীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে অভিযোগ করে তিনি ধর্ষিতাকে ছিনতাইয়ে জড়িতদের আটকের দাবি জানান।

এ বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দাবি করেন, ওই তরুণী তার মায়ের কাছে গেছে।

ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা রাত সোয়া ৭টায় দিকে এই প্রতিবেদককে বলেন, থানা এলাকার বাইরের ঘটনা হওয়ায় হাসপাতালের সামনে থেকে ওই তরুণীকে ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন। আর ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে তার কাছে কেউ অভিযোগও করেননি।

ধর্ষণের অভিযোগের বিষযে সাংবাদিকদের কাছে অভিযুক্ত গাজী এজাজ আহমেদ বলেন, এ সব মিথ্যা অভিযোগ। এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি।