আমাদের বোধোদয়ের অভাব নাকি অত্যাচারী হয়ে উঠছি?

:: আহমেদ হানিফ ::
প্রকাশ: ১ বছর আগে

আজ এক নগরের গল্প বলবো বলে বসেছি,
যে নগরের মানুষেরা সকাল ও সন্ধ্যায় নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে কপাল চাপড়ায়।
এখানের বাবারা সন্তানের ভরণপোষণ না করতে পেরে মরণ কামনা করে, শুনেছি মায়েরা বাজারে সন্তান তোলে কেউ যদি কিনে নিয়ে যায়।

এখানে প্রকাশ্যে মানুষ ঠকানোর বিদ্যা শেখানো হয়, মৃত লাশের শরীরে কাপন জড়িয়ে স্বার্থের বুলি আওড়ায়।
ধর্মালয়ে অসাধু বসেছে, পাঠশালায় বখাটেপনা-
গুরুজন নতশিরে।
বিদ্যা নেমেছে ব্যবসায়, এই নগরে দেখবেন মুদির দোকানে দিচ্ছে বিদ্যার সার্টিফিকেট।
সে নগরে নীতিকথার চর্চা হয় কিঞ্চিৎ, রসহীন কিছু মানুষ বকেই যাচ্ছে নীতিকথা!
কই কেউ শুনছে মনে হয় না।

আজ কতদিনের জমানো কথা বলবো বলে বসেছি,
মশায় একটু শুনুন-
বয়সের দোষে গল্প বলার রোগ হয়েছে, যেদিন খাটিয়ায় উঠবো তখন নিজেই গল্প হয়ে যাবো।

এই নগরের পত্রিকা গুলোর পাতা উল্টাতে গেলেই হতবিহ্বল হয়ে পড়ি, কখনো কান্নায় ভেঙে পড়ি।
ভাবছেন অহেতুক মায়াকান্না করছি বুঝি!
না মশায়,
এখানের পত্রিকা গুলোর শিরোনাম দেখলেই বুঝবেন মানুষের মনের ব্যথা-

যৌতুকের জন্য নির্যাতন, বেপরোয়া গাড়ির আঘাতে লাশের মিছিল, ধর্ষণের শিকার ষোড়শী তরুণী।
বিদ্যালয়ের বই বিক্রির অভিযোগে শিক্ষকের চাকুরীচ্যুত এমন মেলা খবর।
পৃথিবীর আর কোনো নগরীতে এমন ঘটনা হয় কিনা জানা নেই,
তবে, এখানে কয়েকদিন পর পর শ্রমিক আন্দোলন হয়ে থাকে,
হত্যার বিচার চেয়ে যত্রতত্র মানববন্ধন চলে,এখানে বড় বড় বুদ্ধিজীবী মানুষ নিয়মিত পাঠের আসরে জ্ঞান বিতরণ করলেও কারো কর্ণগোচর হয় না।

ষোড়শীর রক্তমাখা জামা নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করলেও মানুষের নজরে মনে হয় পাতানো গল্প, যৌতুকের নির্মম বলিতে নিহত কন্যা সমাজের চোখে চরিত্রহীন, পরকীয়ায় আসক্ত প্রমাণিত হয়।

প্রতিদিন সকালে সূর্যের আগমন চারপাশকে সুন্দর, আলোকিত করলেও এই নগরের মানুষগুলো সর্বদায় অন্যায়রত আছে।
মানুষের সত্তা অল্প দামে বিক্রির নজির আছে, মিথ্যা সাক্ষীর দোকান খুলে বসে বাজারীরা।
সেই নগরের মানুষের আহ্বানে বিষ মিশানো থাকে, সমাজপতিদের পক্ষপাতিতে কত মানুষের জীবনের অন্ধকার নেমে আসে।
এখন,
এই নগরের দুইটি বিষয় নিয়ে কতক রসহীন বুলি আওড়ায়ে আমিও বসে রইবো নতুন কোনো ঘটনায় শিরোনাম হচ্ছে কিনা এই নগরে।

সড়ক দুর্ঘটনা:
৯ জানুয়ারী ২০২২ খ্রিস্টাব্দে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনের সূত্রমতে, ২০২১ সালে দেশব্যাপী সংঘটিত ৫ হাজার ৩৭১ টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত হয়েছে ৭ হাজার ৪৬৮ জন।যার মধ্যে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮০৩ জন।এবার ভাবতে পারেন আমরা কতটা নিরাপদ এই জনপদে,মানুষের দামই নেই এখানে, কত মানুষের মরণের পর হুঁশ ফিরবে এই নগরের মানুষের।বাসের বেপরোয়া গতিতে প্রতিনিয়ত মরছে মানুষ তাতে কারো মাথাব্যথা নেই, দু’চারি আন্দোলন হলেও কি হবে, মুক্তির পন্থা কারোই জানা নেই।
যার মধ্যে রোড সেফটির বিষয়টি নিয়ে বুলি আওড়ালেও মানার পক্ষে কেউ নেই,
ফিটনেস বিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালক এমন ঘটনার জন্য দায়ী নয় কি?

যে মানুষগুলো সড়কে নিজের প্রাণ হারাচ্ছে তাদের পরিবারের কি কেউ খোঁজ নিচ্ছি?
কেমন আছে তারা?
না,একদমই এমন করছি না,
মানুষ মরলে আমাদের ক্ষতি কি?
মরুক, কমুক-
আমরাতো বেঁচে রয়েছি!

 

শ্রমিক আন্দোলন:

এই নগরীতে প্রতিনিয়ত রাজপথে শ্রমিকের আন্দোলন দেখতে পাওয়া যায়,
বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন,
মানুষ মারার আন্দোলন,
কর্মঘন্টা নিয়ে আন্দোলন,
কত শত আন্দোলনের পরেও শ্রমিকরা পায়না তাদের ন্যায্য অধিকার, অনাহারে মরলেও মালিকপক্ষের কিছু যায়-আসে না।
প্রতিনিয়ত মানুষেরা নানান সমস্যায় জর্জরিত হলেও কারো যেন দায়বদ্ধতা নেই।
গত কয়েকদিন ধরে চা শ্রমিকদের আন্দোলন চলমান রয়েছে,
আচ্ছা,
আমাদের কেন বুঝে আসে না তাই বুঝিনা-
মানুষ কেন নিজের কর্ম ফেলে রেখে আন্দোলন করবে?
নিশ্চয় তাদের বড় ধরণের ক্ষতি হচ্ছে,
ক্ষতি হচ্ছে তাদের জীবনমানের।
তাইতো তারা রাজপথে নেমে আসতে কুণ্ঠিতবোধ করছে না।

আন্দোলন চলমান থাকুক,
মানুষ বাঁচুক,
ফিরে পাক তাদের ন্যায্য অধিকার।
সবিশেষ,
আপনাদের কাছে কতক প্রশ্ন রেখে এই আয়োজনের যবনিকা করছি-
আচ্ছা এইসব বিষয় গুলো দেখে, জেনে আমাদের কি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে আমরা অত্যাচারী হয়ে উঠছি না?

আমরা মিথ্যার আয়োজনে নতুন গল্প বুনছি নাতো?
বোধোদয় কবে হবে আমাদের?
ষোড়শীর পাঁজরের হাড় ভেঙে যারা সুখ খুঁজে সে নগরে কিসের সভ্যতা!

এই নগরের কথাগুলো গল্প হলেও সত্য!
নিজেকে বদলাই, সত্য বুঝতে শিখি-
মানুষের কদর দিতে পারলেই বোধোদয় জাগ্রত হবে-
নাকি দিন দিন বোধোদয়ের অভাব বোধ করে অত্যাচারী হয়ে উঠছি?
উত্তরটা সবার জানা দরকার।

লেখক: আহমেদ হানিফ; শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।